• সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন
  • |
  • |
Headline :
মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় হার্বেক্স এন্ড কোং (ইউনানী) এর কর্মকর্তা মোঃ হাসিবুর রহমান পাপ্পু নিহত ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের অভিযোগে পাবনায় বৃদ্ধ গ্রেফতার প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-যুবলীগের মিছিল খালে ভাসছিল সবজি বিক্রেতার মরদেহ বেড়েছে খেজুর চিনি ছোলার, কমেছে পেঁয়াজের রোজায় বাড়তি চাহিদার পণ্য মাওলানা ভাসানী ছিলেন মেহনতী মানুষের মুক্তির দিশারী- এ্যাড. শিমুল বিশ্বাস শেখ হাসিনার রায় ঘিরে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার দিনাজপুরে শীতকালীন বাদাম চাষে আগ্রহী হচ্ছে গোপালগঞ্জ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত পিরোজপুরে কলেজ ভাঙচুর জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

সংকট দেখিয়ে গোপন গুদাম থেকে দ্বিগুণ দামে সার বিক্রি

স্পষ্টবাদী ডেস্ক / ৩৩ Time View
Update : সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫
সংকট দেখিয়ে গোপন গুদাম থেকে দ্বিগুণ দামে সার বিক্রি
সংকট দেখিয়ে গোপন গুদাম থেকে দ্বিগুণ দামে সার বিক্রি

ঘাটাইলে বিসিআইসি এবং বিএডিসি ডিলারপ্রতি সরকারিভাবে সারের বরাদ্দ থাকলেও ছিটেফোঁটাও জোটে না খুচরা ডিলারদের ভাগ্যে। এর ফলে ঠিকমতো সার পাচ্ছেন না কৃষক। দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। সমকালের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সার নিয়ে কারসাজির চিত্র।

‘ঘাটাইলে সার আছে, সার নেই’ শিরোনামে গত ৪ আগস্ট সমকালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে ইউএনও তাঁর বক্তব্যে বলেন, উপজেলায় সারের সংকট আছে। অন্যদিকে কৃষি কর্মকর্তা বলেন সারের সংকট নেই। দুই কর্মকর্তার পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে সমকাল জানতে পারে উভয় কর্মকর্তার বক্তব্যই সঠিক। তবে কারসাজি অন্য জায়গায়।

এই উপজেলায় বিসিআইসি সারের ডিলারের সংখ্যা ১৮ এবং বিএডিসি ডিলার ২০ জন। সরকারিভাবে ডিলারপ্রতি বিভিন্ন ধরনের সারের যে বণ্টন করা হয়, তার পরিমাণ প্রায় একই। প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ডে একজন খুচরা ডিলার নিয়োগ দিয়েছে সরকার। বিসিআইসি ডিলারদের থেকে সার নিয়ে বিক্রি করবেন খুচরা ডিলাররা। কিন্তু এক ছটাক সারও পান না বলে অভিযোগ তাদের। তাহলে ডিলারদের বরাদ্দের সার যায় কোথায়? খুচরা ডিলাররা সার পান কোথায়? খুচরা ডিলারদের ভাষ্য, বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরে বেশি দরে সার কিনে বিক্রি করেন তারা।

সাগরদীঘি ইউনিয়নের সাগরদীঘি বাজারে বিসিআইসি সারের ডিলার ছিলেন আশীষ কুমার সাহা। তাঁর প্রতিষ্ঠান রাজীব এন্টারপ্রাইজ। আশীষ কুমারের মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটির হাল ধরেন তাঁর ছেলে রাজীব সাহা। আলাদাভাবে সার ও কীটনাশক ব্যবসায় নামেন তাঁর আরেক ছেলে সঞ্জয় সাহা। ৫ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনে অভিযোগ দেন ১৬ জন খুচরা সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী। অভিযোগে বলা হয়, রাজীব সরকারি বরাদ্দের সার ছাড়াও বিপুল পরিমাণ সার অবৈধভাবে সাগরদীঘি বাজারের বাঘাড়া রোডের একটি গুদামে সংরক্ষণ করে বিক্রি করেন। কিন্তু খুচরা ডিলারদের তিনি এক বস্তা সারও দেন না। সঞ্জয় সাহা বিভিন্ন কোম্পানির অনুমোদনহীন ভেজাল কীটনাশক অবৈধভাবে বিক্রি করছেন। এতে উর্বরতা হারাচ্ছে জমি।

সাগরদীঘি বাজারের বিসিআইসি খুচরা ডিলার আশোক চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘প্রতি মাসেই বিসিআইসি ডিলাররা সার বরাদ্দ পান, কিন্তু আমরা পাই না। সাত বছরের মধ্যে মাত্র একবার কিছু সার পাইছি। তাও শুধু ইউরিয়া, অন্য কোনো সার পাই নাই।’

শহিদুল ইসলাম নামে একজন ডিলার জানান, ছয় বছরের মধ্যে এক ছটাক সারও পাননি। ডিলার রাজীব এন্টারপ্রাইজের কাছে গেলে বলে ডিও পায়নি। অথচ ঘরে সার থাকতেও ডিলার সার দেন না। বারবার সারের জন্য গেলে ডিলার বলেন, এই সার বরাদ্দের সার না, অন্য জায়গা থেকে কেনা। তিনি বলেন, ‘ঘাটাইলের জন্য বরাদ্দের সার আমাদের না দিয়ে বেশি দামে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় বিক্রি করেন।’

রাজীব সাহার দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভিত্তিহীন। বাইরের উপজেলায় সার বিক্রি করেন না। তাঁর কোনো গোপন গুদামও নেই। ব্যবসায়ী সঞ্জয় সাহা বলেন, ‘আমি কয়েকটি কোম্পানির ডিলার, সেই কোম্পানির কীটনাশক বিক্রি করি। কিছু কিছু কীটনাশক কোম্পানির প্রতিনিধি আমাকে দিয়ে যান।’

ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া, সাগরদীঘি, লক্ষিন্দর, রসুলপুর ও সন্ধানপুর ইউনিয়নগুলোর মাটির রঙ লাল। এ মাটিতে সোনা ফলে। ব্যাপকভাবে চাষ হয় কলা, ড্রাগন, পেঁপে ও হলুদ। এ বছর যোগ হয়েছে আখের আবাদ। কৃষকরা জানান, এ ধরনের ফসল ফলানোর জন্য এলাকাগুলোতে সারের চাহিদা অনেক বেশি। টিএসপি সারের চাহিদা বেশি থাকায় এই সার সরকারি দামে পাচ্ছেন না তারা। কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। তাদের দাবি, দোকানে সাঁটানো সরকারি মূল্য তালিকা নিছকই লোক দেখানো।

কৃষক রাজিবুল ইসলাম বলেন, খুচরা ডিলারদের কাছে গেলে তারা বলেন, সার নেই। ডিলারদের কাছে কিনতে গেলে বলেন, সার নেই। তাহলে সরকারিভাবে বরাদ্দের সার যায় কোথায়? কৃষকের অভিযোগ, ডিলারদের দোকানে সার পাওয়া যায় না, তবে গোপন গুদামে সারের অভাব নেই। দাম দ্বিগুণ। এই কথার সূত্র ধরে গত ১০ অক্টোবর সন্ধ্যায় সাগরদীঘি বাজারে অবস্থান করেন এই প্রতিবেদক।

মা ট্রেডার্সের মালিক মর্তুজ আলী বিএডিসি ডিলার। সাগরদীঘি বাজারে তাঁর দোকান। পরিচালনা করেন তাঁর ছেলে আমিনুল ইসলাম। সখীপুর রোডে রয়েছে তাঁর সারের গোপন গুদাম। সেখান থেকে সার বিক্রির সময় কথা হয় ক্রেতা মো. আলমগীরের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতি বস্তা টিএসপি সার কিনলেন দুই হাজার ৪৮০ টাকা দিয়ে। অথচ ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা সারের সরকারি মূল্য এক হাজার ৩৫০ টাকা। আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সরকারি দরে সার বিক্রি করি।’

কৃষকের দাবি, সরকার নির্ধারিত দামে সার কিনতে পারলে প্রতি মাসে তাদের ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা বেঁচে যেত। এ বিষয়ে সরকারের কোনো তদারকি নেই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহানের ভাষ্য, প্রতিনিয়ত সারের দোকানগুলো মনিটরিং করছেন তারা। খুচরা বিক্রেতারা ডিলারদের থেকে সার পাচ্ছেন। উপজেলায় সারের সংকট নেই। কৃষক বেশি দাম দিয়ে সার কিনেছেন– এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খুচরা ডিলারদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ সমকালকে বলেন, উপজেলায় সারের সংকটের কথা বিবেচনা করে রেজুলেশন করে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। খুচরা ডিলারদের করা অভিযোগের কপি পেয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে বিষয়টি দেখার জন্য বলা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category