• বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:১৩ পূর্বাহ্ন
  • |
  • |
Headline :
পাবনার আটঘরিয়ায় সড়কের পাশ থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার ১৭ বছরে ১৪তম সরকারের পতন দেখল নেপাল নেপালে আটকেপড়া বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছেন, পরিস্থিতি শান্ত হলে ফিরবেন বালেন্দ্রর বদলে এখন সুশীলাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চায় নেপালের জেন-জি মুরাদনগরে ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ে হামলা, দুই শিক্ষকসহ আহত ১৫ কিশোরগঞ্জে “সন্ধ্যা মডেল লাইব্রেরী” নিবন্ধন পেয়েছে তরুণদের কর্মসংস্থানে নতুন দিগন্ত : সাটুরিয়ায় ডব্লিউএস কমার্সের শাখা অফিস উদ্বোধন আন্দোলন ছিনতাই হবার দাবি নেপালের জেন-জি’র একের পর এক সরকার পতন, জেন-জিদের ক্ষোভে পুড়ছে বিশ্ব ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ীদের জামায়াত আমিরের শুভেচ্ছা

একের পর এক সরকার পতন, জেন-জিদের ক্ষোভে পুড়ছে বিশ্ব

Reporter Name / ৬ Time View
Update : বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
একের পর এক সরকার পতন, জেন-জিদের ক্ষোভে পুড়ছে বিশ্ব
একের পর এক সরকার পতন, জেন-জিদের ক্ষোভে পুড়ছে বিশ্ব

তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতির মাঠে কেবল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তারা ছিল স্লোগান দেওয়া বা মিছিল-সমাবেশ ভরাট করার যন্ত্র মাত্র। কিন্তু সময় বদলেছে। আজকের প্রজন্ম—যাদের আমরা জেন-জি নামে চিনি—তারা আর নিছক দর্শক নয়, বরং নিজের ভবিষ্যৎ রক্ষায় তারা রাস্তায় নেমে এসেছে। দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচার আর অগণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ এতটাই শক্তিশালী, তা সরকারকেও নাড়িয়ে দিচ্ছে এবং শাসকগোষ্ঠীকে বাধ্য করছে পিছু হটতে।

বাংলাদেশেই তার বাস্তব উদাহরণ দেখা গেছে গত বছরের জুলাই মাসে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জোয়ারে শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসন হোঁচট খেয়েছিল। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছাত্রদের পদধ্বনিতে কেঁপে উঠেছিল দেশ। অচল হয়ে পড়েছিল প্রশাসন, আর শেষমেশ পতনের মুখ দেখতে হয় সরকারকে ।

একের পর এক সরকার পতন, এবার সেই উত্তাল ঢেউ এসে আছড়ে পড়েছে প্রতিবেশী দেশ নেপালে। সেখানে সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্ত আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি হঠাৎ করেই ফেসবুক, ইউটিউব, এক্সসহ ২৬টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধের ঘোষণা দেন। অথচ নেপালে প্রায় দুই কোটির কাছাকাছি মানুষ এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, যাদের একটি বড় অংশ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জীবিকার জন্য নির্ভরশীল। ফলে রাতারাতি হাজারো মানুষের জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়ে। ক্ষোভ জমতে থাকে, আর সেই ক্ষোভই দ্রুত দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার বিক্ষোভে রূপ নেয়।

প্রথমে রাজধানী কাঠমান্ডুতে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ কিছুদিনের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। নেপালের রাজপথ রক্তে ভিজে যায়। প্রাণ যায় বহু মানুষের। তবে এই আন্দোলনকে শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার ফলাফল হিসেবে দেখা যাবে না। এর পেছনে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে সঞ্চিত ক্ষোভ—ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি আর দমনপীড়নের বিরুদ্ধে এক সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিরোধ।

সমালোচকরা বলছেন, সরকারের যুক্তি—‘সোশ্যাল মিডিয়া নিবন্ধিত হয়নি’—এটি আসলে কেবল অজুহাত। নেপালের চিকিৎসা খাতের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ডা. অরুণ সায়ামি সরাসরি সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ‘সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেই আপনারা ভাবেন যা খুশি তাই করতে পারবেন। কিন্তু বর্তমান তরুণ সমাজ কারও দাস নয়। রাজা জ্ঞানেন্দ্রের মতো একনায়কসুলভ আচরণ বন্ধ করুন।’ তার মতে, রাজা জ্ঞানেন্দ্রের শাসনামলের শেষের দিকে যেমন দমনপীড়নের পথ নেয়া হয়েছিল, ওলির সরকারও সেই একই ভুল করছে। আর এ কারণেই ক্ষোভ ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আন্দোলন আসলে এক প্রজন্মের শক্তির বহিঃপ্রকাশ। আজকের জেন-জি আগের প্রজন্মের মতো নিছক আবেগ দিয়ে রাজনীতি করে না। তারা বেশি পড়াশোনা করে, বেশি জানে এবং প্রযুক্তির কারণে বিশ্ব-রাজনীতির সাথে আপডেট থাকে। তাই তাদের দমন করা এত সহজ নয়। ইতিহাস সাক্ষী—যেখানে তরুণরা পথে নেমেছে, সেখানে ক্ষমতাশালী শাসকও টিকতে পারেনি।

নেপালের এই উত্তাল আন্দোলন তাই কেবল একটি রাজনৈতিক ঘটনাই নয়; এটি এক প্রজন্মের জাগরণের প্রতীক। যাদের কণ্ঠরোধ করতে চাইলেও সম্ভব হবে না। বরং, সরকারের উচিত বলপ্রয়োগের পথ না বেছে এই প্রজন্মের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসা। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথই পারে দেশকে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে দিতে। কারণ, জেন-জিরা আজ আর কারও হাতের পুতুল নয়—তারা নিজের ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category