২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আত্মত্যাগকারীদের প্রতি সম্মান জানাতে ঢাকায় আধুনিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে সরকার। আহত, কর্মক্ষম ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা পাবেন এসব ফ্ল্যাট। দুটি প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হবে দুই হাজার ৩৬৪টি ফ্ল্যাট, ব্যয় হবে দুই হাজার ১০৬ কোটি টাকা।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে প্রকল্প দুটির প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। চলতি (জুলাই) মাসেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় দুটি প্রকল্পেরই চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।
নিহত, আহত ও কর্মক্ষম পরিবারকে আধুনিক ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাট হবে আধুনিক। প্রতিটি ফ্ল্যাট নিহত পরিবারের ওয়ারিশ পাবে। অন্যদিকে আহতরা নিজেদের নামে ফ্ল্যাট পাবেন।- জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী
বিনামূল্যে ৮০৪টি ফ্ল্যাট পাবে শহীদের পরিবার
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট দিতে প্রকল্প নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মোট ৮০৪টি ফ্ল্যাট তৈরিতে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬২ কোটি টাকা। সরকারের কোষাগার থেকে এ ব্যয় করা হবে। মিরপুর হাউজিং এস্টেটের ১৪ নম্বর সেকশনে মিরপুর পুলিশ লাইন্স সংলগ্ন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের পাঁচ একর জমি আছে। ষাটের দশকে অধিগ্রহণ করা এ জমি। প্রতিটি ফ্ল্যাট হবে ১৩৫৫ বর্গফুট আয়তনের।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন এবং তাদের জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের আওতায় ছয়টি ১৫ তলাবিশিষ্ট আবাসিক ভবনে ৬শ এবং ১২টি ১০ তলাবিশিষ্ট আবাসিক ভবনে ২০৪টিসহ ৮০৪টি আবাসিক ফ্ল্যাট এবং অন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপত্য অধিদপ্তর অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী নির্মিত হবে।
ভবনে যা থাকবে
ভবনে উন্নতমানের স্যানেটারি ও বৈদ্যুতিক ফিটিংস, লিফট, জেনারেটর, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা, সোলার প্যানেল, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। তাছাড়া প্রস্তাবিত প্রকল্পে কমিউনিটি ভবন, খেলার মাঠ, বহিঃবিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, ড্রেন, কালভার্ট ও নিজস্ব গভীর নলকূপ স্থাপনাসহ সম্ভাব্য সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা রাখার কথা বিবেচনা করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় অন্য আনুষঙ্গিক খাত যেমন- বহিঃস্থ বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ ডেসকো, পানি সংযোগ ও বহিঃস্থ পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ ঢাকা ওয়াসা, গ্যাস সংযোগের কাজ তিতাস গ্যাস লিমিটেড, কমিউনিটি ভবন, অ্যাপ্রোচ রোড, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, ওয়াকওয়ে ও স্ট্রিট লাইট নির্মাণের কাজ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং মসজিদ নির্মাণের কাজ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাস্তবায়ন করবে।
আহতরা পাবেন ১৫৬০টি ফ্ল্যাট
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের জন্যও ঢাকায় বিনামূল্যে ফ্ল্যাট দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। রাজধানীর মিরপুর-৯ নম্বরে সরকারি জমিতে নির্মিত হবে ১৫৬০টি আবাসিক ফ্ল্যাট, যা অগ্রাধিকারভিত্তিতে হস্তান্তর করা হবে আহতদের মধ্যে। এ প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৪৪ কোটি টাকা, যা সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে।
এসব ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ১২৫০ বর্গফুট, যাতে থাকবে দুটি শয়নকক্ষ, ড্রয়িংরুম, ডাইনিংরুম, রান্নাঘর এবং তিনটি শৌচাগার। গুরুতর আহত বা পঙ্গু ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হবে কক্ষগুলো, যাতে তাদের চলাচল ও ব্যবহারে সুবিধা হয়।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিহত, আহত ও কর্মক্ষম পরিবারকে আধুনিক ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাট হবে আধুনিক। প্রতিটি ফ্ল্যাট নিহত পরিবারের ওয়ারিশ পাবে। অন্যদিকে আহতরা নিজেদের নামে ফ্ল্যাট পাবেন। প্রকল্পে ফ্ল্যাট দেওয়ার জন্য কারা অগ্রাধিকার পাবেন তা নির্ধারণ করবে জুলাই অধিদপ্তর, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয় যৌথভাবে।’
সরকারি তালিকা অনুযায়ী- ৪৯৩ জনকে ‘অতি গুরুতর আহত’ এবং ৯০৮ জনকে ‘গুরুতর আহত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, মোট আহত সংখ্যা ১৪০১ জন। এসব আহতের মধ্যে ১৯ জন দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়েছেন। আর ৩৮২ জন একটি চোখ হারিয়েছেন। এছাড়া কিছু ব্যক্তি হারিয়েছেন পা। এজন্য ভবনটির ডিজাইন এমনভাবে করা হচ্ছে যাতে পঙ্গু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সহজে চলাচল করতে পারেন।
গত ৭ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা হয়। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, চলতি (জুলাই) মাসেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় দুটি প্রকল্পই চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে। ২০২৯ সালের জুন মেয়াদের মধ্যে উভয় প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।