• রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন
  • |
  • |
Headline :
সমকাল সুহৃদ সমাবেশের আয়োজনে পাবনায় শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত কোস্ট গার্ডের অভিযানে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদকসহ আটক ৬ অপুষ্টিতে দুই কোটি মানুষ গোপালগঞ্জে প্রাথমিকের কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ রংপুরে সেপ্টেম্বর মাসে তুলনামূলক কম তাপমাত্রার মধ্যেও ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে নলছিটিতে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সঃ) উদযাপন স্বেচ্ছাসেবকদল ও শ্রমিকদলের মধ্যে প্রীতি ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত ৬০ কোটি রুপি হাতিয়ে নিলেন শিল্পা-রাজ? চাঞ্চল্যকর অভিযোগ মুহাম্মদ (সা.)-এর কথা, কর্ম ও জীবনাদর্শ সব মুসলমানের জন্য অবশ্য অনুসরণীয় নীলফামারীতে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

আলুর কেজিতে উৎপাদন খরচ ২২ টাকা, চাষির পকেটে যাচ্ছে মাত্র ৪ টাকা

স্পষ্টবাদী ডেস্ক / ২০ Time View
Update : রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫
আলুর কেজিতে উৎপাদন খরচ ২২ টাকা চাষির পকেটে যাচ্ছে মাত্র ৪ টাকা

রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌর এলাকার আসমা কোল্ড স্টোরেজে আলু বাছাই করছেন শ্রমিকেরা। গত বৃহস্পতিবার সকালে পবার বায়া এলাকায়

রাজশাহীতে এখন হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৪ টাকায়। হিসাব করে দেখা গেছে, কেজিপ্রতি ৬ টাকা হিমাগারভাড়া, শ্রমিক খরচ, নষ্ট আলু ও কাঁই (ছোট) আলুর সঙ্গে দাম সমন্বয় করে চাষিদের পকেটে ঢুকছে মাত্র ৪ টাকা ৬ পয়সা। এবার এক কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি। হিমাগারের বাইরে রাজশাহীর বাজার পর্যায়ে এখন খুচরায় প্রতি কেজি আলু ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহে হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম বেড়ে ১৫ টাকা হয়েছিল। তখন খুচরা বাজারে সেই আলু ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দরের এই পতন ঘটেছে। অথচ গত বছর এ সময়ে আলুর দাম ছিল কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। বেশি দামের আশায় এবার রাজশাহীতে আলুর চাষ বেশি হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বাস্তবে আরও সাড়ে তিন হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। উৎপাদিত হয়েছে ১০ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টন। গত বছর আলু উৎপাদিত হয়েছিল ৯ লাখ ৪০ হাজার টন।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার চোরখৈর গ্রামের আলু চাষি জুয়েল রানা এবার ৩৪ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। গত শুক্রবার তিনি ৩৫৯ বস্তা (৬৫ কেজি করে) আলু বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে ৩২৫ বস্তা ভালো আলু পেয়েছেন। ১৪ টাকা কেজি হিসাবে দাম পেয়েছেন ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫০ টাকা। এর মধ্যে ৬ টাকা কেজিপ্রতি হিমাগার ভাড়া ও শ্রমিক খরচ বাবদ গেছে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা। অবশিষ্ট থাকে ৯০ হাজার ৭৫০ টাকা। এর সঙ্গে ১০০ টাকা বস্তা হিসেবে ২৯ বস্তা নষ্ট আলু থেকে পেয়েছেন ২ হাজার ৯০০ টাকা, ২৬০ টাকা বস্তা হিসাবে পাঁচ বস্তা কাঁই (ছোট) আলু বিক্রি করে পেয়েছেন ১ হাজার ৩০০ টাকা। নষ্ট ও ছোট আলু থেকে মোট পেয়েছেন ৪ হাজার ২০০ টাকা। এটা যোগ করলে তাঁর মোট টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় ৯৪ হাজার ৯৫০ টাকা। হিমাগারে রাখা ৩৫৯ বস্তা মানে ২৩ হাজার ৩৩৫ কেজি আলু বিক্রি করে জুয়েল রানা হাতে পাবেন ৯৪ হাজার ৯৫০ টাকা। অর্থাৎ তাঁর প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ছে ৪ টাকা ৬ পয়সা। অবশ্য তিনি এই আলু মাঠে বিক্রি করলেই ১৪ টাকা কেজি হিসাবে দাম পেতেন। এখন যে টাকায় বিক্রি করলেন, সেই টাকাও এখনো পাননি। বাকিতে বিক্রি করেছেন।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা।
জুয়েল রানা বলেন, এবার নষ্ট আলুর পরিমাণও বেশি। আলুর গায়ে একটি দাগ থাকলেই সেটি নষ্ট হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। হিমাগারের মালিক এক কেজি আলু থেকে শ্রমিক খরচসহ পাচ্ছেন প্রায় সাত-আট টাকা। আর চাষির পকেটে আসছে চার টাকা। এর চেয়ে পরিহাসের বিষয় আর কী হতে পারে! তিনি বলেন, ঢাকার বাজারে এক কেজি আলু প্রায় ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এমন একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে যে তারা হিমাগার থেকে বের করে ১৪ টাকা কেজির বেশি দরে আলু বিক্রি করার গ্রাহক পাচ্ছেন না।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা

না বেচলে পচে যাবে, বেচলে ঋণের বোঝা বাড়বে
রাজশাহীর বিভিন্ন হাটবাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজশাহীর খুচরা ব্যবসায়ীরা নগরের খড়খড়ি বাজার থেকে হিমাগার থেকে বের করা আলু ১৬ টাকা কেজি দরে কিনছেন। গাড়িভাড়া ও মুনাফা যোগ করে তারা ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

পবার সরকার কোল্ড স্টোরেজের ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি তিন হাজার বস্তা আলু ১৪ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে কিনে হিমাগারে রেখেছেন। তিনি বলেন, তাঁদের কেজিপ্রতি ৬ টাকা হিমাগার ভাড়া, একটি বস্তা ৮২ টাকা ও গাড়িভাড়া ৫০ টাকা বাদ দিয়ে এখন সেই আলু ১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। লোকসানের ভয়ে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না। এতে অনেক হিমাগারে আলু পচতে শুরু করেছে। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ পানির দরে আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন শুধু হিমাগার খালি করার জন্য।

পবা উপজেলার কৃষক নাসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি এই বছর তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। জমিতেই তো লস (লোকসান) হইছিল। ভাবছিলাম, কয়টা মাস হিমাগারে রাখলে হয়তো দামটা বাড়বে। তিন বিঘা জমিতে ২ লাখ টাকা ব্যয় করে আলু চাষ করে উল্টো লোকসানে সেই আলু বেচতে হচ্ছে। সার, বীজ আর হিমাগারের ভাড়ার টাকা মিলিয়ে যা খরচ হয়েছে, তাতে পথে বসার জোগাড়। এই আলু এখন না বেচলে পচে যাবে, আবার বেচলে শুধু ঋণের বোঝা বাড়বে। আমরা এখন কী করব, কিছুই বুঝতেছি না।’

পবা উপজেলার একজন মৌসুমি আলু ব্যবসায়ী হাবিব বলেন, ‘গত বছর যাঁরা আলু মজুত করেছিলেন, তাঁরা ভালো লাভ করেছিলেন। সেই আশায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আর নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রায় দেড় হাজার বস্তা আলু কিনেছিলাম হিমাগারে রাখার জন্য। ভেবেছিলাম, বর্ষায় দাম বাড়লে বিক্রি করে দেব। এখন বাজারদর যা, তাতে হিমাগার থেকে আলু বের করার সাহসই পাচ্ছি না। এই লোকসান কীভাবে সামলাব, ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছি না। আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীরা এবার পথে বসে গেছেন।’

এদিকে চুক্তির সময়সীমা শেষ হয়ে আসায় হিমাগার মালিকেরা আলু বের করে নেওয়ার জন্য নোটিশ দিতে শুরু করেছেন। এতে কৃষকদের সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।

চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি, দাম কম
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই দাম ছিল কম। রাজশাহী অঞ্চলের হিমাগারগুলোতে এখনো প্রায় ২৫ লাখ টন আলু মজুত আছে, যার মধ্যে ২০ লাখ টনই খাবার আলু।

এ দরপতনের কারণ হিসেবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। আমাদের দেশে উৎপাদিত আলুর মান ভালো না হওয়ায় রপ্তানিও সম্ভব হচ্ছে না। রপ্তানি করা গেলে চাষিরা উপকৃত হতেন।’

রাজশাহী হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের ৩৭টি হিমাগারে এখনো ৭০ শতাংশ আলু রয়ে গেছে। তিনি বলেন, চাষিরা বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় সরকারের উচিত ছিল আলুর ন্যূনতম একটি দাম নির্ধারণ করে দেওয়া, যাতে চাষিরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে না যান। আলুর দামের যে অবস্থা, তাতে আগামীতে কৃষকেরা আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন, যা ভবিষ্যতে নতুন সংকট তৈরি করবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category