• শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন
  • |
  • |

পদ্মার ভয়াল গ্রাসে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি ও দোকানপাট।

স্পষ্টবাদী ডেস্ক / ৪৬ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫

শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা মাঝিরঘাট এলাকার পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদী রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ১৯টি স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

সোমবার (৭ জুলাই) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ করেই শুরু হয় ভয়াবহ ভাঙন। বিকেল ৪টার পর পরিস্থিতি এতটাই অবনতি হয় যে, একে একে বসতবাড়ি, দোকানপাট পদ্মায় তলিয়ে যেতে থাকে। মুহূর্তেই ভেঙে যায় মানুষের স্বপ্নের ঘরবাড়ি। আতঙ্ক আর হাহাকারে ভরে ওঠে পুরো মাঝিকান্দি-নাওডোবা এলাকা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভাঙনের তাণ্ডব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মাত্র কিছু সময়ের মধ্যে নদীতে হারিয়ে গেছে ছয়টি পরিবারে বসতবাড়ি এবং ১৩টি দোকানপাট। এর ফলে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি এবং ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামে অন্তত ৬০০ পরিবার এখন নদীভাঙনের সরাসরি হুমকিতে। আতঙ্কে অনেকেই রাতের অন্ধকারে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র ও ব্যবসার মালপত্র নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল সেতুর পূর্ব পাশে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ রক্ষা বাঁধ। কিন্তু তার পরও গত বছর নভেম্বর, এ বছর ৮ জুন এবং সর্বশেষ সোমবারের ধসে তুলিয়ে গেছে বসতবাড়ি ও দোকানপাট।

স্থানীয়রা জানান, পদ্মার এমন ভয়াল রূপে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকাবাসী। অনেকেই জীবনের শেষ সঞ্চয় দিয়ে গড়া ঘরবাড়ি আজ নদীতে হারিয়ে ফেলেছেন। চোখের সামনে গিলে নিচ্ছে সব কিছু স্মৃতি, স্বপ্ন, ইতিহাস। তাদের দাবি, অপেক্ষা না করে স্থায়ী ও টেকসই রক্ষা বাঁধ করতে হবে। না হয় পদ্মার থাবায় একদিন পুরো জাজিরাই হারিয়ে যাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দুপুর ৩টা থেকে হঠাৎ বাঁধের মাটি সরে যেতে দেখি। এরপর একটার পর একটা দোকান, ঘরবাড়ি পদ্মায় বিলীন হতে থাকে। আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। এখন যদি স্থায়ী বাঁধ না হয়, তাহলে আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।

নাওডোবা কান্দি এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জলিল সরদার ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, কয়েক দিন ধরেই নদীতে তীব্র স্রোত। বাঁধের পেছনে ফাটল দেখা দিয়েছিল, আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম; কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। সেই অবহেলার ফলেই আজকের ভয়াবহ ভাঙন। এভাবে চললে পুরো গ্রাম মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে, সাহায্য দিতে ও ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করতে জরুরি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, আজকের ধস ২০০ মিটারের মতো হবে। ডাম্পিংয়ের পর এ ভাঙনটা হয়েছে। বিবিএ অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করেছিল। তবে আমরা জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category