• শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:২০ অপরাহ্ন
  • |
  • |
Headline :

তারেক রহমান এক আধুনিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি – অ্যাডভোকেট আল মুস্তাসিম নবী নিকু

স্পষ্টবাদী ডেস্ক / ২১৪ Time View
Update : বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
তারেক রহমান: এক আধুনিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি

তারেক রহমান এক আধুনিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি

অ্যাডভোকেট আল মুস্তাসিম নবী নিকু


বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অবিচ্ছেদ্য নাম তারেক রহমান। তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, বরং একটি ধারার, একটি দর্শনের এবং একটি স্বপ্নের প্রতিনিধি। তাঁর রাজনৈতিক জীবন, ব্যক্তিগত সংগ্রাম, ত্যাগ এবং নেতৃত্বের কৌশল বাংলাদেশের গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যারা বাংলাদেশের রাজনীতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, তারা জানেন যে তারেক রহমানের আবির্ভাব এক সুদীর্ঘ প্রেক্ষাপটের ফসল। তাঁর রাজনীতিতে আগমন কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়; বরং ইতিহাস, পারিবারিক ঐতিহ্য, জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং সময়ের দাবির এক সমন্বিত উত্তর।

তারেক রহমানের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে একটি রাজনৈতিক পরিবারে। তাঁর পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক। মা বেগম খালেদা জিয়া দেশের ইতিহাসে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। এই পারিবারিক রাজনৈতিক আবহ তাঁর চিন্তা-চেতনা, মূল্যবোধ এবং নেতৃত্বদক্ষতা গঠনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। তবে তারেক রহমান নিজেকে কখনও কেবল রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাননি। তিনি নিজের চিন্তা, কৌশল, এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে নিজস্ব নেতৃত্বের ধরণ গড়ে তুলেছেন। তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি শুরু থেকেই আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক এবং সময়োপযোগী ছিল।

২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন তারেক রহমান নতুন প্রজন্মের রাজনীতির প্রবক্তা হিসেবে উঠে আসেন। তিনি দলীয় কর্মীদের মাঝে আধুনিক রাজনৈতিক দর্শনের বীজ বপন করেন। তাঁর নির্দেশনায় তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়। ছাত্রদল, যুবদলসহ অঙ্গ সংগঠনগুলোতে নতুন নেতৃত্বের উন্মেষ ঘটে। তাঁর ‘জেনারেশন নেক্সট’ ধারণা শুধু একটি স্লোগান ছিল না, বরং ছিল তরুণদের সম্পৃক্ত করার একটি সুপরিকল্পিত প্রয়াস। তাঁর বৈঠক, আলোচনায় দলীয় কর্মীদের মতামতের মূল্য দিতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, নেতৃত্ব মানে একক সিদ্ধান্ত নয়, বরং যৌথ চিন্তার প্রতিফলন।

তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবন কেবল দেশের সীমানায় আবদ্ধ নয়। ২০০৮ সালের পর থেকে তিনি রাজনৈতিক কারণে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। কিন্তু বিদেশে থেকেও দেশের রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব, দিকনির্দেশনা এবং সক্রিয়তা অব্যাহত রয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে তিনি ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাঁর প্রতিটি বক্তব্য, ভিডিও বার্তা এবং ভার্চুয়াল সভা দলের নেতা-কর্মীদের জন্য প্রেরণার উৎস। দলীয় কাউন্সিল, কর্মসূচি, নির্বাচন বা আন্দোলন—সব ক্ষেত্রেই তাঁর উপস্থিতি, পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনা ছিল কার্যকর ও সময়োপযোগী।

তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির “ভিশন ২০৩০” ছিল এক যুগান্তকারী দলীয় ঘোষণাপত্র। এই দলিলের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, প্রযুক্তি, প্রশাসনিক সংস্কার এবং দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের সুস্পষ্ট রূপরেখা দিয়েছেন। এই রোডম্যাপ কেবল একটি রাজনৈতিক দলিল নয়, বরং ছিল দেশের সার্বিক পরিবর্তনের একটি পরিকল্পিত দিকনির্দেশনা। এতে জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা, অংশগ্রহণমূলক প্রশাসন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, এবং প্রযুক্তিনির্ভর রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার করা হয়। বিশেষত দুর্নীতি বিরোধী পদক্ষেপ এবং সুশাসনের জন্য নির্ধারিত কর্মসূচি দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে প্রশংসিত হয়।

সম্প্রতি বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি তারেক রহমানের নেতৃত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। এই কর্মসূচিতে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার সুরক্ষা, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, এবং গুম-খুনের নিরপেক্ষ তদন্তসহ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কাঠামোগত সংস্কার স্থান পেয়েছে। ৩১ দফার মাধ্যমে তারেক রহমান  শাসনব্যবস্থার অসঙ্গতি ও ব্যর্থতার বিরুদ্ধে একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক প্রতিরোধের রূপরেখা দাঁড় করিয়েছেন।

তারেক রহমানের নেতৃত্ব কেবল রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, বিভিন্ন রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মহল, এবং গণতান্ত্রিক ফোরামে তিনি বাংলাদেশের মানুষের অধিকার, ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেছেন। তাঁর এই কূটনৈতিক তৎপরতা দেশের রাজনীতিতে বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

তরুণ প্রজন্মের প্রতি তারেক রহমানের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাই তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা, নেতৃত্বগুণ এবং দেশপ্রেমের বীজ বপন করা প্রয়োজন। বিএনপির সংগঠনগুলোতে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য তিনি বারবার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপির তরুণ নেতারা আজ দেশব্যাপী আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। কর্মসংস্থান, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন—এই সবকিছুতে তারেক রহমানের পরিকল্পনা তরুণদের জন্য আশার আলো।

তবে রাজনৈতিক জীবনে চ্যালেঞ্জও ছিল অগণিত। ২০০৭ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা, গ্রেফতার, এবং শারীরিক নির্যাতন তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। আন্তর্জাতিক মহল তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোকে বারবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে উল্লেখ করেছে। কারাবাস, চিকিৎসার অভাব, শারীরিক নির্যাতন—এই সব বাধা তাঁকে রাজনৈতিকভাবে আরও দৃঢ় এবং মনোবলসম্পন্ন করেছে। প্রবাসে থেকেও তিনি দলের কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং নেতৃত্বের দৃঢ়তা দেখিয়েছেন।

তারেক রহমানের ব্যক্তিজীবনও অনাড়ম্বর। তিনি শিক্ষা জীবন শুরু করেন ঢাকার নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি ছিলেন মেধাবী এবং পরিশ্রমী। রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আগে ব্যবসায়িক খাতে সক্রিয় ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে সাদাসিধে জীবনযাপন, পরিবারপ্রেম এবং সাধারণ মানুষের সাথে সহজ-সরল আচরণ তাঁর ব্যক্তিত্বের অনন্য দিক।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার এই সংকটকালে তারেক রহমানের নেতৃত্ব নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। দলীয় কাঠামো পুনর্গঠন, রাজনৈতিক আন্দোলন পরিচালনা, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিগত রূপরেখা—সবখানেই তাঁর চিন্তা-ভাবনা প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি এখন একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করছে।

দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা, যখন মানুষের মধ্যে ভোটাধিকার হারানোর শঙ্কা, যখন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে—ঠিক তখনই তারেক রহমানের নেতৃত্ব জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠছে। তারেক রহমান বারবার বলেছেন, গণতন্ত্রের বিকল্প গণতন্ত্রই। শক্তির মাধ্যমে, দমনপীড়নের মাধ্যমে কোনো সরকার টিকে থাকতে পারে না। পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন গণআন্দোলন, জনগণের ঐক্য এবং নেতৃত্বের দূরদর্শিতা। এই সবকিছুর সম্মিলিত প্রতিচ্ছবি আজ তারেক রহমানের মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে।

তিনি যে শুধু বিএনপির নেতা, তা নয়। তিনি হয়ে উঠেছেন দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধান মুখ, দেশের তরুণদের অনুপ্রেরণা এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের চালিকাশক্তি। তাঁর স্বপ্ন—একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, এবং সুশাসনভিত্তিক বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশে জনগণের অধিকার নিশ্চিত হবে, গণতন্ত্রের মূলনীতি বজায় থাকবে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে।

অতীতের অভিজ্ঞতা, বর্তমানের নেতৃত্ব এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা—সবকিছু মিলিয়ে তারেক রহমান এখন শুধু একজন রাজনীতিক নন, বরং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অন্যতম প্রধান পুরুষ। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে তাঁর জন্য রয়েছে এক ভিন্ন মাত্রার সম্মান, আস্থা এবং প্রত্যাশা।

লেখক:
আল মুস্তাসিম নবী নিকু
অ্যাডভোকেট, ঢাকা জজ কোর্ট
আইন বিষয়ক সম্পাদক, পাবনা জেলা ছাত্রদল


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category