তিনি আরও যোগ করেন, ‘যখন ইসরায়েল ইরানে প্রথম আক্রমণ চালায়, সেটা ছিল ইসরায়েলের জন্য এক মহাদিবস। কারণ সেই হামলায় যতটা ক্ষতি হয়েছিল, তার সমান ক্ষতি পরবর্তী সব আক্রমণ মিলিয়েও হয়নি।’
ট্রাম্প ওই সময় রিপাবলিকানদের প্রতি আহ্বান জানান, সিনেটে আইন পাসের জন্য যেন সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বিল অনুমোদনের পথ খুলতে ফিলিবাস্টার নিয়ম বাতিল করা হয়। তিনি বলেন, যেমনভাবে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল, রিপাবলিকানদেরও তেমন দৃঢ়তার সঙ্গে সিনেটের এই নিয়ম পরিবর্তন করতে হবে।
গত ১৩ জুন কোনো প্রত্যক্ষ উসকানি ছাড়াই ইসরায়েল ইরানে ব্যাপক হামলা চালায়। এতে নিহত হন দেশটির কয়েকজন জেনারেল, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং অসংখ্য সাধারণ মানুষ। হামলার জবাবে ইরান ইসরায়েলের দিকে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রও সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে—ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। তবে যুদ্ধ শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে ওয়াশিংটন জানায়, এই হামলায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং ইরানকে সতর্ক করে দেয় যেন মার্কিন সেনা বা স্বার্থের ওপর প্রতিশোধ না নেয়।
সে সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘আজ রাতে ইসরায়েল একতরফাভাবে ইরানে হামলা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এ অভিযানে জড়িত নয়। আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এখন মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা।’
ইরান পরবর্তীতে কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়।
এরপর থেকেই ট্রাম্প ক্রমাগত এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্যের কৃতিত্ব দাবি করে আসছেন। তিনি বারবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করেছে। তবে বৃহস্পতিবারের বক্তব্যে তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে দাবি করলেন—যুদ্ধের সূচনাতেই তিনি ছিলেন নেতৃত্বে।
তেহরান এখনো তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র প্রকাশ করেনি। তবে ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, বহু বছরের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে টিকিয়ে রেখেছে। দেশটির মজুত উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়ামের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প নিজেকে ‘শান্তির প্রার্থী’ হিসেবে তুলে ধরে নতুন যুদ্ধ শুরুর বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু ইরান যুদ্ধের সময় তার নিজ দলেরই কিছু অংশ থেকে তাকে চাপ দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রকে যেন সরাসরি যুদ্ধে না জড়ানো হয়।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প আবারও বলেছেন, তিনি ইরানের সঙ্গে এমন একটি চুক্তি চান, যার মাধ্যমে তেহরান ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করবে। দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকেই ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলেন। যদিও এখন এ বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন প্রশাসনে এখন ইরান নিয়ে নতুন করে আলোচনার কোনো তাগিদ নেই। অন্যদিকে, তেহরানও যুক্তরাষ্ট্রের এই কূটনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে সন্দিহান। ইসরায়েলি হামলার কয়েক দিন আগেই দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।