• বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৯ অপরাহ্ন
  • |
  • |

৩৩ বছর পর জাকসুর ভোট আজ

স্পষ্টবাদী ডেস্ক / ১৫ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
৩৩ বছর পর জাকসুর ভোট আজ
৩৩ বছর পর জাকসুর ভোট আজ

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় আজ বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট হতে যাচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী ও পুরুষ) পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই চার পদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত প্যানেল শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম ও ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীদের মধ্যে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।

নির্বাচন তফসিল সূত্রে জানা যায়, চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলে মোট ভোটার ১১ হাজার ৯১৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ছয় হাজার ১০২, ছাত্রী পাঁচ হাজার ৮১৭।

জাকসুর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী, নির্বাচনে ২৫ পদের বিপরীতে লড়বেন ১৭৯ জন প্রার্থী। তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিপি পদে চূড়ান্ত প্রার্থী ১০ জন, জিএস পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন।

তবে একজন স্বতন্ত্র জিএস পদপ্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় এখন জিএস পদে লড়বেন মূলত আটজন। নারী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ছয়জন ও পুরুষ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ১০ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১টি ছাত্র হল ও ১০টি ছাত্রী হল রয়েছে। ২১টি হলে ৩১৫টি পদে লড়বেন ৪৬৭ জন প্রার্থী।

প্রতিটি হলে ১৫ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
জাকসুতে লড়ছে যেসব প্যানেল : জাকসু নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সমর্থিত প্যানেলের মধ্যে রয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম, ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুর রশিদ জিতুর নেতৃত্বে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন, বামপন্থী সংগঠন ও সাংস্কৃতিক জোট সমর্থিত সম্প্রীতির ঐক্য। এর বাইরে বামপন্থী সংগঠনগুলোর অন্য অংশের ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ নামে পাঁচ সদস্যের আংশিক প্যানেল ও জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের একাংশের মুখপাত্র মাহফুজ ইসলামের নেতৃত্বে আট সদস্যের ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ নামে আরেকটি আংশিক প্যানেল রয়েছে। এর বাইরে অনেক প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন।

শীর্ষ চারটি পদে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই : নির্বাচনে সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের ভিপির প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় তাঁদের প্যানেল ভিপি প্রার্থী ছাড়াই নির্বাচন করতে হচ্ছে।

ভিপি পদে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের মো. শেখ সাদী হাসান, শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল, শিক্ষার্থী সমন্বিত জোটের আরিফুল্লাহ আবিদ ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন জোটের আব্দুর রশিদ জিতুর মধ্যে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জিএস পদে ছাত্রদলের তানজিলা হোসাইন বৈশাখী, শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম, শিক্ষার্থী সমন্বিত জোটের মাজহারুল ইসলাম, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলনের শাকিল আলী ও সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের শরণ এহসানের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে (পুরুষ) পদে ছাত্রদলের মো. সাজ্জাদউল ইসলাম, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন নিবিড় ভুঁইয়া, শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের জিয়াউদ্দিন আয়ান, সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের নূর এ তামিম স্রোত এবং শিক্ষার্থী সমন্বিত জোটের ফেরদৌস আল হাসানের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

৩৩ বছর পর জাকসুর ভোট আজ

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে (নারী) ছাত্রদলের আনজুমান আরা ইকরা, শিক্ষার্থী সমন্বিত জোটের আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা, শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের মালিহা নামলাহ ও সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের ফারিয়া জামান—এই চারজনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

ক্যাম্পাসে ভোটের আমেজ : গতকাল বুধবার ক্যাম্পাসজুড়ে ভোটের আমেজ বিরাজ করে। নির্বাচনী প্রচারের কোলাহল থেমে গেলেও শিক্ষার্থীদের আড্ডা, হল-করিডর শুধু ভোট এবং সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিগত দিনে তাঁরা ভোটের আমেজ থেকে দূরে ছিলেন। সেই পরিবেশ আবার ফিরে এসেছে। বিভিন্ন প্রার্থীর জয়-পরাজয় নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

৩৩ বছর পর জাকসুর ভোট আজ

৩৩ বছর পর জাকসুর ভোট আজ

২১ হলে ভোট, সিনেটে ভোট গণনা : গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয় থেকে এক সংবাদ বিবৃতিতে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় জাকসু নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আজ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ১১টি এবং ছাত্রীদের ১০ হলে একযোগে বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। ভোট গ্রহণের জন্য ২১টি ভোটকেন্দ্রে ২২৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচনে ৬৭ জন পোলিং অফিসার (শিক্ষক) এবং ৬৭ জন সহায়ক পোলিং অফিসার (কর্মকর্তা) নিয়োগ করা হয়েছে। ভোটে গ্রহণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে ভোটে গণনা হবে।

দুই হলে হবে না হল সংসদের ভোট : হল সংসদ নির্বাচনে বেগম সুফিয়া কামাল হল ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। এই দুই হলে শুধু কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। বেগম সুফিয়া কামাল হলে ১৫ পদের ১০টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন, বাকি পাঁচ পদ শূন্য রয়েছে। নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে ১৫টি পদের ছয়টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন প্রার্থীরা, বাকি ৯টি পদ শূন্য রয়েছে।

ক্যাম্পাসে থাকবে ১৫০০ পুলিশ : নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাসের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এক হাজার ৫০০ পুলিশ, সাত প্লাটুন বিজিবি ও পাঁচ প্লাটুন আনসার সদস্য ক্যাম্পাসের পরিসীমায় মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মোকাবেলায় আনসার এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য ক্যাম্পাসে এবং ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করবে।

যেভাবে ভোট হবে : বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয় একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে কিভাবে ভোট দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের তাঁদের আইডি কার্ড সঙ্গে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। ভোটাররা তাঁদের নির্দিষ্ট টেবিলে যাওয়ার পর পোলিং অফিসারকে তাঁদের ছবিযুক্ত আইডি কার্ড দেখাতে হবে। কর্মকর্তারা তাঁদের পরিচয় যাচাই করবেন, এরপর ভোটারকে তালিকায় স্বাক্ষর করতে হবে। স্বাক্ষরের পর তাঁর হাতে অমোচনীয় কালি লাগানো হবে। একজন কর্মকর্তা ভোটারকে চারটি ব্যালট পেপার দেবেন। তিনটি কেন্দ্রীয় পদের জন্য এবং একটি হল সংসদের জন্য। ব্যালট পেপারগুলো নিয়ে ভোটারকে ভোট দেওয়ার বুথে প্রবেশ করতে হবে। সেখানে তিনি তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন।

নারী ভোটারদের বড় ভূমিকা : জাকসু নির্বাচনে নারী ভোটার হচ্ছেন পাঁচ হাজার ৮১৭ জন। এ কারণে নির্বাচনে তাঁদের বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। নারী ভোটের পাল্লা যেদিকে হেলবে, ফলাফলও সেদিকে চলে আসতে পারে।

নারী ভোটাররা কেমন প্রার্থীকে বেছে নেবেন, এ ব্যাপারে গতকাল কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে অন্তত ২০ জন নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোটের ক্ষেত্রে তাঁরা এমন প্রার্থী বেছে নেবেন, যাঁরা নারীর ক্ষমতায়ন, নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করবেন।

এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ফাইজা মাহজাবিন বলেন, ‘নারীবান্ধব শব্দটা শুনতে সহজ হলেও এর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগরে নারীর স্বাধীনতা, মুক্তির বোধ ও ক্ষমতায়নের দীর্ঘ দিনের চর্চাকে যাঁরা অক্ষুণ্ন রাখতে পারবেন, তাঁরাই জিতে আসুন—এটাই কাম্য।’

জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আরশি চাকমা বলেন, ‘আমি চাই এমন প্রার্থী জিতুক, যাঁরা সত্যিই সবার প্রতিনিধি হয়ে কাজ করবেন। শুধু কোনো একটা গোষ্ঠীর নয়, বরং সবার হয়ে কথা বলবেন, কাউকে বাদ দেবেন না, কারো সঙ্গে বৈষম্য করবেন না।’

৩৩ বছর পর জাকসুর ভোট আজ

ডাকসুর প্রভাব ভোটে পড়বে কি না : জাকসু নির্বাচনে ডাকসুর ভোটের ফলাফলের প্রভাব পড়বে কি না—তা নিয়ে চলছে আলোচনা। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, ঢাবিতে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল একচেটিয়া যেভাবে জয়লাভ করেছে, এখানে এভাবে হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রতিটি প্যানেল থেকে একাধিক প্রার্থী জিতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাদমান সাকিব সৌমিক বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের অপ্রত্যাশিত বিজয় জাতীয় রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে একটি ধারণা রয়েছে, কোনো ঘটনার প্রতীকী সাফল্য ভবিষ্যতের ঘটনাকেও প্রভাবিত করতে পারে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে জাকসুতে এর প্রভাব পড়ার কথা। তবে জাহাঙ্গীরনগরের বাস্তবতা ঢাকার চেয়ে ভিন্ন। এখানে সেভাবে প্রভাব না-ও পড়তে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category