১৯৫১ সালের আগ পর্যন্ত নেপালে সম্পূর্ণ রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। নেপারের তৎকালীন রাজাদের বলা হতো রানা। তার সহায়ক হিসেবে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীও থাকতেন, তবে কে প্রধানমন্ত্রী হবে, তা উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হতো।
তারপর ১৯৫১ সালে এক গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনে পতন ঘটে রানাদের। ক্ষমতায় আসেন রাজা মহেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব এবং নেপাল পার্লামেন্টারি রাজনীতিতে প্রবেশ করে।
কিন্তু ১৯৬১ সালে নেপালে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষেধাজ্ঞা দেন রাজা মহেন্দ্র। তার এ পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতাকে এককভাবে রাজতন্ত্রের হাতে কুক্ষিগত করা। তবে পার্লামেন্ট ব্যবস্থা চালু ছিল এবং নির্বাচনের ভিত্তিতেই সেখানে এমপিরা আসন পেতেন। তবে তারা নিজেদের কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিতে পারতেন না।
প্রায় ৩ দশক এই অবস্থা চলার পর ১৯৯০ সালে জনগণ বিক্ষোভ শুরু করে এবং তা শান্ত করতে তৎকালীন রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব রাজনৈতিক দলগুলোর পর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। সেই বিক্ষোভের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রবেশ করে নেপাল।
১৯৯৬ সালে নেপালের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি রাজতন্ত্র ও রাজতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সমর্থক রাজকীয় পার্লামেন্ট ব্যবস্থা বিলোপের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করে এবং দশকব্যাপী সেই আন্দোলন-সংগ্রামে নিহত হয়েছেন ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ।
গত মার্চ মাসে নেপালে রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল কাঠমান্ডুতে। পরিস্থিতি সামলাতে সেনা মোতায়েন করতে হয়। সেই বিক্ষোভের ছ’মাস কাটতে না-কাটতেই পতন ঘটল কে পি শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন সরকারের।
২০০৬ সালে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেন নেপালের মাওবাদীরা। রাজতন্ত্র বিলোপ হয়, নেপাল একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০১৫ সালে নতুন সংবিধান গ্রহণ করে দেশটি।
কিন্তু রাজতন্ত্রের বিলোপ হওয়ার পর থেকে নতুন সংকটের আবর্তে প্রবেশ করে নেপাল। কারণ ২০০৮ সাল থেকে যতগুলো সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সেগুলোর কোনোটিই সর্বোচ্চ আড়াই বছরের বেশি টিকতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়েছে মাত্র এক বছরের মাথায়।