• রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৩ পূর্বাহ্ন
  • |
  • |
Headline :
“পাবনা সোসাইটি”-এর উদ্যোগে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির অঙ্গীকার পিরোজপুরে তাহসিন শিক্ষা পরিবারের আয়োজনে সবক প্রদান ও অভিভাবক সম্মেলন পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার অঙ্গিকা শ্যামনগর পৌরসভার বর্জ্য অপসারণের জন্য ১ম বারের মতো যুক্ত হলো ভ্যান গাড়ি নীলফামারী ডিমলায় গণঅধিকার পরিষদের ৭ নেতাকর্মী জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মানোন্নয়ন না হলে স্বীকৃতি বাতিল শেখ হাসিনার ১৫ বছরের সঙ্গে বর্তমান শাসনব্যবস্থার খুব বেশি পার্থক্য নেই : রুমিন ফারহানা ছবির জাদুকর পাবলো পিকাসোর জন্মদিন আজ পাবনার  ফরিদপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০ চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু শোক সংবাদ রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে চাহিদার ২০ ভাগ টিকিট পাচ্ছে না মানুষ

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজ পুড়ে ছাই

স্পষ্টবাদী ডেস্ক / ২৪ Time View
Update : রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজ পুড়ে ছাই
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজ পুড়ে ছাই

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে গতকাল দুপুরে আগুন লাগে। প্রতি দুই বছর অন্তর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আয়োজন করা হয় অগ্নিনিরাপত্তা মহড়া। কখনো ডামি বিমানে আগুন লাগিয়ে, কখনো হাইজ্যাক বা বোমা হামলার দৃশ্যকল্প সাজিয়ে পরীক্ষা করা হয় বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত সক্ষমতা। কাগজে-কলমে সেই মহড়ায় নির্ধারিত সময়েই ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ‘সফলভাবে’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

কিন্তু গতকাল শনিবার কার্গো ভিলেজে লাগা ভয়াবহ ‘আসল’ আগুন সেই মহড়ার কার্যকারিতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করল।

১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিটের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, এমনকি রোবটের ব্যবহার সত্ত্বেও এই আগুন ৭ ঘণ্টার আগে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে আমদানি করা শিল্পের মূল্যবান কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের চোখের সামনেই পুড়ে ছাই হয়ে গেল। পুড়ল জরুরি ‘কাগজপত্র’ও। নির্বাক তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার ছিল না তাঁদের।

গতকাল দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের কার্গো ভিলেজ এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। আগুন ছড়িয়ে পড়লে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ফ্লাইট স্থগিত করা হয়, যা রাত ৯টা থেকে আবার চালু হয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাত ৯টার পর দুবাই থেকে আসা একটি ফ্লাইট শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করে সুপারিশ প্রদান করতে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পাঁচ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এনবিআর। এদিকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর পেছনে নাশকতা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের (পণ্য রাখার স্থান) যে অংশে আগুন লেগেছে, সেখানে আমদানি করা পণ্য রাখা হয়। মূল বিমানবন্দরের উত্তরাংশে লাগা এই আগুনে কার্গো ভিলেজের বিশাল এলাকা ছেয়ে যায় কালো ধোঁয়ায়, যা বহু দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল।

আগুনের তীব্রতার কারণে বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঢাকাগামী একাধিক আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পাশের মানবন্দরগুলোতে অবতরণ করানো হয়।

জানা গেছে, আগুন লাগার খবর পেয়েই ধাপে ধাপে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ৩৭টি ইউনিটের পাশাপাশি বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিতভাবে কাজ করেন। কিন্তু আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি। রাত ৯টা থেকে সব ফ্লাইট কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়েছে।’

সেখানে কর্তব্যরত অন্তত ২৫ জন আনসার সদস্যসহ আরো অনেকে আহত হয়েছেন, যাঁদের সিএমএইচ ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। আগুন লাগার ঘটনায় নিকুঞ্জ থেকে বিমানবন্দরমুখী সড়কে গাড়ির জট তৈরি হয়। ফলে প্রায় চার কিলোমিটার এই পথ পাড়ি দিতে দীর্ঘ সময় লাগে, ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ।

এই আগুনে সবচেয়ে বড় খেসারত দিতে হলো ব্যবসায়ীদের। কার্গো ভিলেজের ওই গোডাউনগুলোতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা কোটি কোটি টাকার শিল্পের মূল্যবান কাঁচামাল মজুদ ছিল, যা ডেলিভারির অপেক্ষায় ছিল।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই ঘটনা আমদানি খাতের জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা। একই সঙ্গে এমন একটি সুরক্ষিত এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র বা নাশকতা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য তাঁরা জোরালো দাবি জানিয়েছেন।

বিমানবন্দরের এই নাজুক পরিস্থিতিকে এভিয়েশন খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ‘বড়সড় সতর্কসংকেত’ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। এভিয়েশন বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলমের মতে, ‘আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা বা আইকাওয়ের এনেক্স-১৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এই মহড়াগুলোর মূল লক্ষ্যই হলো জরুরি মুহূর্তে বিভিন্ন সংস্থা কত দ্রুত ও কার্যকরভাবে সাড়া দিতে পারে, তা নিশ্চিত করা।’

তিনি বলেন, ‘শাহজালাল বিমানবন্দর একটি কেপিআইভুক্ত (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) এলাকা। এখানে এমন একটি আগুন সাত ঘণ্টার আগে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারাটা প্রমাণ করে যে মহড়ার সেই ত্বরিত গতির সঙ্গে বাস্তবতার যোজন যোজন ফারাক রয়েছে। এই ব্যর্থতা আমাদের সক্ষমতাকে বিশ্বদরবারে প্রশ্নবিদ্ধ করল। কার্গো ভিলেজের এই আগুন শুধু কোটি টাকার পণ্যই পোড়ায়নি, এটি বিমানবন্দরের জরুরি ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের দুর্বলতাকেও স্পষ্ট করে দিয়েছে। এই ভয়াবহ ক্ষতি থেকে শিক্ষা নিয়ে সক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’

আগুন নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতি ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা : ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া অফিসার তালহা বিন জসিম জানান, দুপুর সোয়া ২টার দিকে তাঁরা বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটসংলগ্ন কার্গো ভিলেজে আগুনের খবর পান। প্রাথমিকভাবে ২৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় এবং পরে আরো ৯টি ইউনিট যোগ দেয়। সব মিলিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মোট ৩৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বাত্মকভাবে কাজ করে। আগুন লাগার সাত ঘণ্টা পর রাত ৯ টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে সেনা-বিমান-নৌ বাহিনী : আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর ফায়ার, মেডিক্যাল ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের সদস্যরাও আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিমানবন্দরের নিজস্ব ফায়ার সেকশন আগুন লাগার পরপরই কাজ শুরু করে।

আইএসপিআর জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্গো সেকশনে সংঘটিত অগ্নিনির্বাপণে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি ফায়ার ইউনিট ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী। এ ছাড়া বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এ ঘটনায় উদ্ধার সহায়তায় যোগ দিয়েছে দুই প্লাটুন বিজিবি।

আগুন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে অধিদপ্তরের মিডিয়া শাখার স্টেশন অফিসার তালহা বিন জসিম বলেন, ‘ঘটনাস্থল ফায়ার স্টেশন থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বে হওয়ায় প্রথম ইউনিটিগুলো পৌঁছেছে ২টা ৫০ মিনিটে। তারা প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। এরপর ধারাবাহিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের অন্য ইউনিটগুলো বিকেল ৫টা ১১ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে।’ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল ঘটনাস্থলে ছিলেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি যে একটি অংশ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও পরক্ষণেই অন্য অংশে আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমে রোবটের মাধ্যমেও আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। কাজ করতে গিয়ে অনেক কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির আশঙ্কা : তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগায় তৈরি পোশাক খাতের উদ্যেক্তাদের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা বিজিএমইএকে অবহিত করার জন্য সদস্যদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। ২৫০টি কারখানার পণ্য পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কার্গো ভিলেজ ব্যবহারের হিস্যা রয়েছে পোশাক আমদানি ও রপ্তানিকারকদের।’

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএইএবি) সভাপতি কবীর আহমেদ বলেন, ‘ভয়াবহ আগুনে এক্সপ্রেস কুরিয়ার, কার্গো স্টোর সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। বিমানবন্দর কেপিআইভুক্ত এলাকা, এখানে আগুন নেভানোর সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা থাকা উচিত। আগুনে বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতি হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’

ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) নির্বাহী পরিচালক টি আই এম নুরুল কবীর বলেন, ‘আগুনে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় ক্ষতি হলো। সেখানে ফার্মাসিউটিক্যালস কম্পানি, পোশাক খাতসহ অনেক খাতের কাঁচামাল ছিল। যেগুলো বিশ্বের বহু দেশ থেকে আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এগুলো স্পর্শকাতর সামগ্রী। বিশ্বের অন্যান্য দেশে স্পর্শকাতর সামগ্রী আলাদা করে রাখা হয়। আমরা বারবার বলেছি, ডিজিটাল সিস্টেমে পণ্য হ্যান্ডলিং করার জন্য। এখানে সেগুলো প্রায় অনুপস্থিত। অনেক কার্গো আমাদের এখানে আসতে চায়নি। এটা একটা ম্যানেজমেন্ট ফেইলিওর।’

কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন বিমানবন্দর : কার্গো সেকশনে অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপকতায় কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন বিমানবন্দর। সময় বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে ধোঁয়া। দূর-দূরান্ত থেকেও সেই ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখা যাচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা : ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী ফারুক হোসেন নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে কার্গো ভিলেজের একটি এসির কাছে প্রথম আগুন লাগতে দেখেন। তিনি বলেন, ‘আমি আগুন দেখে তিন কেস পানি নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।’

তিনি জানান, এই গোডাউনে ড্রামভর্তি ওষুধের কেমিক্যাল ছিল। আগুন লাগার পর প্রত্যক্ষদর্শীরা কেমিক্যালের ড্রাম বিস্ফোরিত হওয়ার বিকট শব্দ পেয়েছেন।

আগুনের সূত্রপাত কিভাবে : কার্গো ভিলেজ লম্বায় আনুমানিক ৩০০ মিটার। বিমানবন্দরের উত্তর-পূর্ব কোণায় এর অবস্থান। বিমানের কার্গো শাখার তিনজন কর্মী দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁরা বলেছেন, কুরিয়ার শাখা থেকে আগুনের সূত্রপাত। এরপর তাঁরা দৌড়ে বেরিয়ে আসেন।

কার্গো ভিলেজের যে অংশে কুরিয়ারের কাজকর্ম চলে, সেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার কথা বলেছেন কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা।

অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম ভুইয়া মিঠুর ভাষ্য, শনিবার সরকারি ছুটির দিনে দুপুর ২টা পর্যন্ত কার্গো ভিলেজের নিয়মিত কাজকর্ম চলে। সেখানে তখনো অনেক শ্রমিক, আনসারসহ লোকজন ছিলেন। কিন্তু আগুন লাগার পর আনসারসহ অন্যরা সবাইকে সরিয়ে দেন।

আবার সারা দিনের শিফটে যাঁদের কাজ করার কথা ছিল, তাঁদের তখন দুপুরের খাবারের বিরতি চলছিল। এ কারণে আগুন লাগার সময় সেখানে এয়ারলাইনস ও এজেন্টদের কর্মী কম ছিলেন।

মিঠু বলেন, কুরিয়ার গুদামের এক পাশে রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে। দেশের পোশাক খাতসহ বিভিন্ন শিল্পের জন্য আনা অনেক রাসায়নিক আকাশপথে আমদানি করা হয়।

কার্গো ভিলেজে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা : সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগুন লাগা স্থানটি মূলত বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি পণ্য মজুদের গোডাউন। পাশাপাশি কার্গো কমপ্লেক্সে কিছু জেট ফুয়েলও ছিল, বিমান মেরামতের জন্য।

কার্গো ভিলেজের যত পণ্য ছিল, বেশির ভাগই সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগুনের ভয়াবহতা এতই বেশি যে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ এই মুহূর্তে নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্ষতির পরিমাণ কয়েক শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বিপর্যয়ের মুখে ফ্লাইট : অগ্নিকাণ্ডের পরপরই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এক জরুরি বার্তায় জানায়, যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিমানবন্দরের ফ্লাইট অপারেশন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এই আকস্মিক বন্ধের কারণে ঢাকার আকাশে এবং বিভিন্ন বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও ট্যাক্সিওয়েতে আটকে আছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরগামী বাটিক এয়ারের ওডি-১৬৩ ফ্লাইট এবং ঢাকা থেকে মুম্বাইগামী ইন্ডিগোর ৬ই-১১১৬ ফ্লাইট উল্লেখযোগ্য।

অভ্যন্তরীণ রুটে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সৈয়দপুর থেকে ঢাকাগামী ফ্লাইটটি ঢাকায় না নেমে চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের পর আবার চট্টগ্রামেই ফিরে গেছে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগুন মূলত কার্গো ভিলেজ এলাকায় সীমাবদ্ধ, যাত্রী টার্মিনালে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং জরুরি পরিষেবাগুলোর নির্বিঘ্ন চলাচলের সুবিধার্থে বিমান চলাচল স্থগিত করা হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম এক বিবৃতিতে জানান, ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে নিশ্চিত করা যাচ্ছে যে আগুন সম্পূর্ণ নিভে গেছে। রাত ৯টা থেকে সব ফ্লাইট কার্যক্রম আবার চালু করা হয়েছে।

মাননীয় উপদেষ্টা নিজে বিমানবন্দরে অবস্থান করে সমগ্র পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় করে প্রয়েজনীয় সব কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

আগুন নেভাতে বাতাস মোকাবেলা চ্যালেঞ্জ ছিল : ফায়ার সার্ভিসের ডিজি

গত রাত ১০টার দিকে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের সামনে এক ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, ‘ব্যাপক বাতাসের চাপে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে। বাতাস মোকাবেলা অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। এর ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় সাত ঘণ্টা সময় লেগেছে।’

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় ফয়ার সার্ভিসের দুজন কর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া আনসারের কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জেনেছি। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে তাৎক্ষণিক কিছু জানা যায়নি। ভেতরের ছোট ছোট ঘরে বিভিন্ন জিনিসপত্র থাকায় প্রতিটি জায়গায় একে একে আগুন নেভাতে হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, ‘কী কী জিনিসপত্র পুড়েছে সবকিছু এখনই বলা সম্ভব নয়। আমাদের প্রথম কাজ হলো সম্পূর্ণ আগুন নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাপণ করা এবং এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে সচল করা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category