মুকসুদপুর থানার সিন্দিয়া ঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আলমগীর হোসেন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর নৈশপ্রহরী গৌতম গাইন হত্যা মামলায় জড়িত সন্দেহে রাজা চোকদারকে গত মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে বিধুর পরিত্যক্ত বাড়ি
থেকে মাদক সেবনরত অবস্থায় আটক করেন। এ সময় তিনি জানান রাজা চোকদারের বিরুদ্ধে মুকসুদপুর থানায় হত্যা মামলা সহ বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার) দিয়ে প্রতারণা সহ বিভিন্ন থানায় ৭টি মামলা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপার স্যারের দিকনির্দেশনায় ও মুকসুদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস গৌতম হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারি উক্ত হত্যা মামলায় রাজা চোকদার ওরফে (কিলার রাজা) জড়িত থাকতে পারে।
আমরা বিজ্ঞ আদালতে রাজার বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করেছি, আশা করছি চাঞ্চল্যকর গৌতম হত্যা মামলায় ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিজ্ঞ আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করবেন। আর এর মাধ্যমেই ক্লুলেস গৌতম গাইন হত্যা ও শিক্ষার্থী গৌতম হত্যার রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, জে, কে, এম ,বি মল্লিক উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজা তার বাহিনী নিয়ে নিয়মিত মাদকের আড্ডা ও জুয়ার আসর বসাতো, মাঝে মধ্যে নারী নিয়েও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকতো। নাইট গার্ড গৌতম বাঁধা দেওয়ায় তার সাথে বিরোধ দেখা দেয়। হয়তো সেই বিরোধের জেরে রাজা তার বাহিনী নিয়ে গৌতমকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিয়ে থাকতে পারে। এছাড়াও রাজা এলাকার প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ইফটিজিং ও খুন-খারাপির সাথে জড়িত ছিলো। এর আগে ২০০৫ সালে রাজা চোকদার ওই স্কুলের একজন প্রাক্তন ছাত্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী, চাকুরী প্রত্যাশী গৌতম বিশ্বাসকে বাড়ি থেকে ডেকে জে কে এম বি মল্লিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাদে নিয়ে নির্যাতন করে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করে। পরে শুনেছি মামলায় জামিনে বেরিয়ে সে নিহত গৌতম বিশ্বাসের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাপ দিয়ে সেই মামলার মীমাংসা করেছে।
পুলিশ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিবেন এমনটি আমাদের সকলের প্রত্যাশা। এ বিষয়ে সরেজমিনে গৌতম বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের সাথে কথা হলে তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে ছেলে হত্যার বিচার না পাওয়ার আক্ষেপ ব্যক্ত করে বলেন, আমার সুস্থ ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কিভাবে মেরে ফেললো ওরা জানিনা। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
জলিরপাড় এলাকায় নিরীহ দু’জনকে হত্যায় পুলিশ সন্দেহভাজন আসামি রাজা চোকদারকে আটক করায় পুলিশের প্রতি এলাকাবাসীর আস্থা বেড়েছে এবং খুনিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করার জোর দাবী জানিয়েছেন নিহতের পরিবার সহ এলাকার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ।
উল্লেখ্য, জে, কে, এম, বি মল্লিক উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী গৌতম গাইন প্রতিদিনের ন্যায় গত ০৯/০৭/২০২৫ ইং তারিখে রাতে স্কুল পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিজের পরিচালিত মুদি দোকান থেকে রওনা দিয়ে নিখোঁজ হন। পরবর্তীতে তাঁর পরিবার তাকে খুঁজে না পেয়ে গত ১০/০৭/২০২৫ ইং তারিখে মুকসুদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। (ডায়েরী নং ৫১৫। পরবর্তীতে গত ১১/০৭/২০২৫ ইং তারিখে গোপালগঞ্জ সদর থানাধীন মধুমতি নদীর কংশুর খেয়া ঘাটে গলায় গামছা প্যাঁচানো ভাসমান অবস্থায় গৌতম গাইনের লাশ উদ্ধার করে বৌলতলী ফাঁড়ির পুলিশ। পরবর্তীতে হত্যার শিকার গৌতম গাইনের স্ত্রী মিলি বৈরাগী মুকসুদপুর থানায় অজ্ঞাত আসামী উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং -২৯, তারিখ ১২ জুলাই ২০২৫