পরে তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনজনকেই নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি রাখা হয়।
রাজিদ আয়মান (২০) কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার পৌর ফতেহাবাদ গ্রামের মো. নান্নু মিয়া মাস্টারের ছেলে এবং হাসিবুল হাসান চৌধুরী (২১) একই উপজেলার ধামতী ইউনিয়নের ধামতী গ্রামের মো. ওমর ফারুক চৌধুরীর ছেলে। অপরজনের নাম শিহাব। তার বাড়ি জেলার বুড়িচং উপজেলায় বলে জানা গেছে।
গতকাল বুধবার (৩ আগস্ট) বিকেলে রাজিদ ও হাসিবুলের গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, পুরো এলাকায় এখন এক ধরনের শোক ও প্রার্থনার আবহ বিরাজ করছে। প্রতিবেশী থেকে শুরু করে শিক্ষক সবাই হাত তুলে দোয়া করছেন।
স্বপ্ন নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় কুমিল্লার ২ বন্ধু, এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে
এদিকে রাজিদ ও হাসিবুলের সহপাঠী ও শিক্ষকরা আইসি ইউতে ভর্তি থাকা দুজনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে দোয়া চেয়েছেন। আবেগঘন পোস্টে তারা লেখেন, ‘ওরা দুজন সবসময় একসঙ্গে থাকত। এখনো একই সঙ্গে মৃত্যু শয্যায় শুয়ে আছে, জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।
আমরা বিশ্বাস করি, ওরা আবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে।’
হাসিবুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, দূর দেশে সন্তানের এমন অবস্থার খবর শুনে ভেঙে পড়েছে তার পরিবার। হাসিবের মা বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন আর বলছেন, ‘আল্লাহ আমার ছেলেকে বাঁচিয়ে দিন।’
রাজিদ ও হাসিবুলের বন্ধু আহমেদ শুভ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তাদের শুধু মেধা নয়, স্বপ্নও ছিল একই রকম। ছোটবেলা থেকেই রাজিদ ও হাসিবুল ছিল ভদ্র, মেধাবী ও পরিশ্রমী। তারা দুজনে একই স্কুলে পড়ত, একই পোশাক পরত। ক্লাসে কেউ ফার্স্ট বয় কেউ সেকেন্ড বয় থাকত সব সময়ই। ২০২২ সালে এইচএসসিতে জিপিএ গোল্ডেন ৫ পাওয়ার পর উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাবে এমন কথা আমাকে বলছিল। তারা দুজনই পরিবারকে না জানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ ভর্তির আবেদন করে এবং একই সঙ্গে কোরিয়ান ভাষা শিখে। পরে পরিবার তাদের উচ্চশিক্ষায় বাধা না হয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার পাঠায়।’
আহতদের স্বজনরা জানান, ওনজুর হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা ব্যয় প্রতিদিনই বাড়ছে। পরিবারের পক্ষে এ বিপুল ব্যয়ভার বহন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দূর দেশে চিকিৎসার জটিলতা, অর্থনৈতিক চাপ এবং মানসিক যন্ত্রণায় পরিবারগুলো দিশাহারা হয়ে পড়েছে। সরকারের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।
স্বপ্ন নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় কুমিল্লার ২ বন্ধু, এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে
রাজিদ আয়মানের বাবা স্কুল শিক্ষক নান্নু মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষায় বিদেশে লেখাপড়া করবে। দুই বন্ধু উচ্চশিক্ষার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার কিউংডং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ভর্তির আবেদন করে। মেধা তালিকায় সেখানে চান্স পাওয়ার পর আমি অনেক কষ্টে টাকা ম্যানেজ করে তাকে সেখানেই পাঠাই। গত মঙ্গলবার রাতে স্কুটি দুর্ঘটনায় তারা দুজনই আহত হয়ে এখন হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি। তার এখনো জ্ঞান ফেরেনি। সেখানে তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। আমি আমার ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরায় দেন।’
স্বপ্ন নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় কুমিল্লার ২ বন্ধু, এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে
হাসিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা ওমর ফারুক চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজিদ ও হাসিবুল মঙ্গলবার রাতে ওনজু শহরের একটি বাজারে কেনাকাটা করে বাসায় ফেরার পথে শিহাব নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের তাদের অপর এক বড় ভাই তাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্কুটিকে জোর করে তোলে। স্কুটি চালাচ্ছিলেন শিহাব। কিছুদূর যাওয়ার পর সড়কের স্পিডব্রেকারে (গতিরোধক) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়ে। এতে তিনজনই গুরুতর আহত হয়। পরে পুলিশ এসে তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। আমার ছেলে ও তার বন্ধু এখন মৃত্যুশয্যায়, ৮ দিন পার হলেও তাদের কারো জ্ঞান ফেরেনি। তার মা বাসায় কান্নাকাটি করছে, জানি না ছেলে বেঁচে ফিরবে কি না। আমার ছেলে ও তার বন্ধুর জন্য আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।