পাবনার চাটমোহরে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে সহকারী শিক্ষকের নির্যাতনে সোয়াদ হোসেন (৮) নামের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী রক্তাক্ত জখম হয়েছে। বুধবার (২ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের কানাইয়েরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষার্থী একই গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে।
ঘটনার পরপরই শিশুটিকে প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে তাকে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গুরুতর আহত এই শিশুকে ঘিরে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজুর রহমান ওরফে জিয়া হাফিজ ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিক্ষক হাফিজুর রহমানের অনুমতি নিয়ে বাইরে যায় সোয়াদ। তবে ফিরে আসতে একটু দেরি হওয়ায় শ্রেণিকক্ষে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক তাকে চড় মারেন। ওই চড় শিশুটির নাকে লেগে মারাত্মক জখম হয় এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়।
শিশুটির বাবা মুকুল হোসেন চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, “শিক্ষক শাসন করতে পারে, কিন্তু এমনভাবে মারবে যে রক্তাক্ত করে দেবে—এটা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। লেখাপড়ার কারণে শাসন হলে কিছু বলতাম না, কিন্তু এটা তো নির্যাতন। আমি এর বিচার চাই।”
ঘটনার পর বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমান পলাতক থাকলেও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “শিশুটি ক্লাসে বারবার বাইরে যাচ্ছিল। অনেকবার বলার পরও শোনেনি। পরে ক্লাসে ঢোকার সময় আমি চড় মারতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে নাকে লেগে গেছে। এতে রক্ত বের হয়েছে। আমি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করছি।”
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, “আমি তখন অফিসে ছিলাম। ঘটনা শোনার পর ক্লাসে গিয়ে দেখি সোয়াদ বাড়ি চলে গেছে। পরে তার বাড়িতে গিয়েছি এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অভিযুক্ত শিক্ষক মৌখিকভাবে ছুটি নিয়ে বিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছেন।”
চাটমোহর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। শিক্ষকের এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
শিশু শিক্ষার্থীর উপর এমন নৃশংস আচরণের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় সচেতন মহল সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে দ্রুত বরখাস্তসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।