• শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৪০ অপরাহ্ন
  • |
  • |

‘লাল টুকটুকে জুলাই তোমার বেচো না!

মোঃ সুলতান শেখ / ৯৩ Time View
Update : সোমবার, ৭ জুলাই, ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার লাল করার কর্মসূচি কে বা কারা ঘোষণা করেছে, সম্প্রতি তা নিয়ে উঠেছে ভিন্নমত। এবার এ বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ) প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত।

সোমবার (৭ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বন্ধু তোমার লাল টুকটুকে জুলাই বেচো না!’

‘তোমার লাল টুকটুকে জুলাই বেচো না!’

প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ নিহতদের স্মরণে গত বছরের ২৯ জুলাই সরকার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে। সে সময় এ সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনকারীরা হত্যা ও নির্যাতনের শিকারদের প্রতি সহমর্মিতা ও সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলার এবং ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার লাল করার কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

‘তোমার লাল টুকটুকে জুলাই বেচো না!’
আন্দোলনে লাল ব্যাচ ধারণ নিয়ে ২ দাবি
তবে এ কর্মসূচি কে বা কারা ঘোষণা করেছে, তা নিয়ে উঠেছে ভিন্নমত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের দুজনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা নিয়ে দুই ধরনের দাবি করছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ সম্প্রতি খোলামেলা কথা বলেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্র যখন গণহত্যার পরিবর্তে নাটকীয়ভাবে রাষ্ট্রীয় শোক ও কালো পতাকা উত্তোলনের ঘোষণা দেয়, তখন আবু সাদিক কায়েম আমার কাছে পরামর্শ চান। আমি তাকে বললাম, আমরা পাল্টা কর্মসূচি দেব। তারা যেহেতু কালো বেছে নিয়েছে, আমরা লাল বেছে নিই।

ফরহাদ আরও বলেন, আইডিয়াটি শেয়ার করার পর সাদিক কায়েম বললেন, এটা কার্যকর হতে পারে। এটাই চূড়ান্ত করা হলো। আমরা একটি প্রেস রিলিজ তৈরি করে সমন্বয়কদের কাছে পাঠাই এবং তারা এটি ঘোষণা করেন। পরের দিন দেখলাম, সমাজের সব শ্রেণির মানুষ তাদের ফেসবুক প্রোফাইল লাল করে আপডেট করছেন। এমনকি ড. ইউনূস এবং খালেদা জিয়ার ফেসবুক পেজেও লাল প্রোফাইল শেয়ার করা হয়।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, রাষ্ট্র কালো পতাকার প্রতীক বেছে নিয়েছে, তাই আমরা লাল বেছে নিলাম। লাল রক্তের প্রতীক, যা দিয়ে আমরা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে পারি। এ জন্য আমরা মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ এবং ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার কর্মসূচি ঘোষণা করি।

ফরহাদ জানান, এই কর্মসূচির পেছনে বড় কারণ ছিল তখনকার পরিস্থিতি। আমরা তখন অনলাইন ও সফট কর্মসূচির ওপর নির্ভর করছিলাম। হার্ড কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে দেখা গেল, প্রচুর গ্রেপ্তার ও মামলা হচ্ছে। তাই আমরা সফট কর্মসূচির দিকে মনোযোগ দিই। লাল প্রোফাইল কর্মসূচি যখন ব্যাপক সাড়া পেল, তখন আমরা অনুপ্রাণিত হলাম এবং পরে মাঠের কর্মসূচিতে যাই। প্রায় এক সপ্তাহের সফট কর্মসূচির শেষ ধাপ ছিল এই লাল প্রোফাইল কর্মসূচি।

অন্যদিকে এ কর্মসূচির বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন।

পোস্টে আব্দুল কাদের বলেন, জুলাইয়ে আন্দোলনের শেষের দিকের কর্মসূচিগুলা অনেকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করা হতো। এক্ষেত্রে শিবিরের সাদেক কায়েম এবং ছাত্রদলের রাকিব-নাসির ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করতাম। আগের দিন দুপুরের পর থেকে দফায় দফায় আলোচনা করে পরবর্তী দিনের কর্মসূচি ঠিক করা হতো। তারই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে পরবর্তী দিন রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালন এবং কালো ব্যাজ ধারণের ঘোষণা দেয়।

তিনি বলেন, আমাদের কর্মসূচি ঠিক করতে গিয়ে শেষ বিকেলের দিকে নাসির ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়, সরকারের ঘোষিত শোক দিবস এবং কালো ব্যাজ ধারণের বিপরীতে আমাদের লাল ব্যাজ ধারণের প্রস্তাবনা দেন তিনি। রাকিব-নাসির ভাইয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের একাধিকবার কথা হয়। পরে আমি সাদিক কায়েম ভাইকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। তিনি বললেন, আলোচনা করে আমাকে জানাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি ফোন দিয়ে সম্মতি দেন।

ঢাবি শাখার আহ্বায়ক বলেন, প্রতিদিন কর্মসূচি ফাইনাল করার আগে আমরা চারজন—আমি, মাসউদ, রিফাত, মাহিন আলোচনা করতাম। শিবির ও ছাত্রদলের সঙ্গে অনেক সময় গ্রুপ কলে মিটিং করে কর্মসূচি ফাইনাল করতাম। তারই ধারাবাহিকতায় ওই দিনও আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলাম। রিফাত বলল যে, ‘শোক দিবসের প্রতিবাদে আমরা কালো কাপড় চোখে মুখে বাঁধতে পারি।’ আমি রিফাতকে নাসির ভাইয়ের আইডিয়ার কথা বললাম, লীগ যেহেতু কালো কাপড় দিছে, আমরা এক্ষেত্রে লাল কাপড় বাঁধতে পারি। মাহিনও একই প্রস্তাব দিল।

তিনি আরও বলেন, পরে গতানুগতিক ধারায় বারবার করে সাদিক ভাই এবং নাসির ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করে চোখে-মুখে লাল কাপড় বাঁধার কর্মসূচি ফাইনাল করা হলো এবং ছবি তুলে প্রোফাইল পিকচার দেওয়ার আহ্বান জানানো হলো। যাদের কাছে লাল কাপড় নেই, তারা যেন প্রোফাইল ‘লাল’ করে, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সেই সময়ে রিফাত রশিদ দেশবাসীর প্রতি এমন আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রোফাইল পিকচারের সঙ্গে বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ জুড়ে দেওয়ার বিষয়ে সাদিক ভাই পরামর্শ দেন, পরামর্শের আলোকে তিনি কিছু হ্যাশট্যাগও দিয়ে দেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category