• সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৩ পূর্বাহ্ন
  • |
  • |
Headline :
মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় হার্বেক্স এন্ড কোং (ইউনানী) এর কর্মকর্তা মোঃ হাসিবুর রহমান পাপ্পু নিহত ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের অভিযোগে পাবনায় বৃদ্ধ গ্রেফতার প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-যুবলীগের মিছিল খালে ভাসছিল সবজি বিক্রেতার মরদেহ বেড়েছে খেজুর চিনি ছোলার, কমেছে পেঁয়াজের রোজায় বাড়তি চাহিদার পণ্য মাওলানা ভাসানী ছিলেন মেহনতী মানুষের মুক্তির দিশারী- এ্যাড. শিমুল বিশ্বাস শেখ হাসিনার রায় ঘিরে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার দিনাজপুরে শীতকালীন বাদাম চাষে আগ্রহী হচ্ছে গোপালগঞ্জ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত পিরোজপুরে কলেজ ভাঙচুর জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

রাজস্ব বোর্ডে চরম অস্থিরতা ও অসন্তোষ : অভিযোগ এর তীর সদস্য প্রশাসন মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিনিধি / ৬৫ Time View
Update : রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫
রাজস্ব বোর্ডে চরম অস্থিরতা ও অসন্তোষ অভিযোগ এর তীর সদস্য প্রশাসন মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে
রাজস্ব বোর্ডে চরম অস্থিরতা ও অসন্তোষ অভিযোগ এর তীর সদস্য প্রশাসন মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে

চরম অস্থিরতা চলছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ। ঘুষ, দুর্নীতি, নীতিমালা বহির্ভূত বদলি বাণিজ্য, দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা সব মিলিয়ে সংস্থাটি বর্তমানে চরম ভাবমূর্তি সংকটে। বেশিরভাগ দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সীমাহীন অস্থিরতা। সবচেয়ে বিতর্কিত অবস্থানে রয়েছেন এনবিআর নতুন প্রশাসনে সদস্য হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ফ্যাসিবাদের দোসর ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তার মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি গত ৩ জুলাই এই পদে যোগদান করার পর নীতিমালা বহির্ভূত বদলী নিয়োগ চালিয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তিনি পৃথক বদলী আদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১১শ কর্মকর্তাকে বদলি নিয়োগ করেছেন। প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা এই বদলি খাত থেকে অবৈধ আয় করারও অভিযোগ উঠেছে ঐ সদস্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এআরও, আরও, এসি, ডিসি, জেসি, কমিশনার পর্যায়ের বেশিরভাগ কর্মকর্তাকেই বদলি করা হয়েছে। মোটা অংকের বিনিময়ে লোভনীয় পোস্টিং আবার চাহিদা মোতাবেক ঘুষ দিতে না পারায় ডাম্পিং পোস্টিং নিয়েও কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এনবিআর’র সার্বিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছে।

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বদলি বাণিজ্য করে অর্ধশত কোটি টাকা গ্রহণের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। এহেন ঘুষ কেলেঙ্কারির বিষয়টি জানাজানি হলে সম্প্রতি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা রায়হান মেহেবুব সহ শাখার সৎ কর্মকর্তারা মোয়াজ্জেমের সাথে দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানালে ৩৩ ব্যাচের ঐ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।

এ নিয়েও কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সূত্রমতে এআরও সারোয়ার হোসেন, আবু বকর সিদ্দিক, শাহ মোহাম্মদ আশিকুর রহমান, আজিজ প্রসাদ রুদ্র, মো: আবুল বাশার, সানাউল হক, বাবুল সিংহ, আ: কাদের সানাউল্লাহ, শামীম হোসেন, বনজ কান্তি রায়, আবু হোসেন, শারমিন জাহান, শাহজাহান কবির, কপিল দেব গোস্বামী প্রমুখ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে গড়ে ২০-২৫ লাখ টাকা ঘুষের মাধ্যমে বদলী নীতিমালা লংঘন করে বদলি বাণিজ্য করা হয়েছে। অনুরূপ আরও পদের কর্মকর্তাদের লোভনীয় পদে নিয়োগ দিতে ২৫-৩০ লাখ, এসিদের ৩০-৫০ লাখ, ডিসিদের ৪০-৫০ লাখ, জেসিদের ৫০-৬০ লাখ ও কমিশনার পদে রদবদলে লোভনীয় কর্মস্থলে পোস্টিং দিতে ৩-৫ কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের ঘটনা ঘটেছে।

সুত্র জানায়, এনবিআর সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন হচ্ছেন আওয়ামীলীগের সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও বিমানবন্দর থানা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ফাতেমা জামান সাথীর খুবই ঘনিষ্ঠজন পরিচয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বেপরোয়া ক্ষমতাসিন হয়ে পড়েন। ঐ সময়ে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদেরও তিনি থোরাই কেয়ার করতেন।

ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে অবীধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন শক শত কোটি টাকা। ’বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী) দপ্তরের ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম চাকুরীকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অন্যায় সুবিধা দিয়ে সহকর্মীদের নিকট মুনাফিকি করে ঘুষ গ্রহন করেন। তিনি বাইরে সততার লেবাস দেখান কিন্তু অবৈধ অর্থ লেনদেন হতে বিরত থাকেননি। তার বিরুদ্ধে আমেরিকায় অর্থ পাচার, পাবনা থেকে ১১ কোটি টাকা, ঢাকা কাস্টমস কমিশনার থাকাকালে ব্যাপক দুর্নীতির প্রমান এবং যশোরের কমিশনার থাকাকালে অবৈধ সিগারেট বাণিজ্য হতে শত শত কোটি টাকা অবৈধ অর্থ উপার্জনের সত্যতা রয়েছে।

মোয়াজ্জেমের ছেলে আমেরিকার ঔড়যহ ঐড়ঢ়ংশরহ টহরাবৎংরঃু তে সেমিস্টার প্রতি ৩৫,০০০ ডলার প্রদান করে পড়ালেখা করে। মোয়াজ্জেম হুন্ডির মাধ্যমে এই টাকা আমেরিকায় প্রদান করেন। ছেলে রাগীব মোয়াজ্জেমের এই লেখাপড়ার খরচ কোন মাধ্যমে বিদেশে প্রেরণ করেছেন তার কোনো বৈধ উৎস নেই। আমেরিকার বাল্টিমোরে সম্প্রতি একটি বাড়ী ক্রয় করেছেন ছেলে ও ছেলে বৌ আদিবা গাল্ফারের নামে। বিষয়টি কাস্টমস ডিপার্টমেন্টের সবাই জানে।

উল্লেখ্য গত এপ্রিল মাসে এনবিআর বিলুপ্ত করে “রাজস্ব নীতি” ও “রাজস্ব ব্যবস্থাপনা” নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ জারি হয়। এরপর থেকেই সংস্থার ভেতরে অস্থিরতা দেখা দেয়। অধ্যাদেশ বাতিল ও চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে কর্মকর্তারা “সিবিএ স্টাইলে” ধর্মঘট, কলম বিরতি ও “মার্চ টু এনবিআর” কর্মসূচি পালন করেন। এই আন্দোলনের সময় নির্দিষ্ট কিছু সেবা ছাড়া প্রায় সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। মে ও জুনে বাজেট প্রণয়ন ও রাজস্ব আদায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়েও তারা অচলাবস্থা তৈরি করেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলেন যা এনবিআরের ইতিহাসে নজিরবিহীন শিষ্টাচার লংঘন।

সংস্থার ভাবমূর্তি সংকটে একাধিক ঘটনায় এনবিআরের ভেতরে গভীর অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কর্মকর্তাদের একটি অংশ বলছেন, এই অনিয়মই সংস্থার ভাবমূর্তিকে নিচে নামিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, “এটা অস্বীকারের উপায় নেই, এনবিআর ভাবমূর্তি সংকটে আছে। কিছু কর্মকর্তার কারণে পুরো সংস্থাটিই এখন দুর্নীতির প্রতীক মনে হচ্ছে।” একজন কমিশনার বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, “এখানে অধিকাংশ কর্মকর্তাই কোনো না কোনোভাবে আর্থিক অনিয়মে জড়িত।

পার্থক্য শুধু কে ধরা পড়ছে আর কে পড়ছে না।” একজন দ্বিতীয় সচিবের ভাষায়, “এখন এনবিআরে কাজ করি এই পরিচয় দেওয়াটাই অনেক সময় লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ”তবে এনবিআর বলছে, অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে দুর্নীতি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি করবর্ষ থেকে ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আয়কর ও ভ্যাট অডিটও অনলাইন প্রক্রিয়ায় হচ্ছে। ভ্যাট রিফান্ড ও আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত নথিপত্রও ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোর মাধ্যমে অনলাইনে দাখিল করা যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের আশা, সব কার্যক্রম ডিজিটাল হলে ঘুষ, অনিয়ম ও হয়রানি কমে যাবে এবং ব্যবসায়ীরা স্বস্তি পাবেন।

নিজ আয়কর রিটার্নে অসত্য তথ্য প্রদানকারী এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান দুর্নীতিবাজ সদস্য (শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন) মোয়াজ্জেম ২ জনই স্বৈরাচারের দোসর হওয়ায় হাজারো অভিযোগ উত্থাপন হওয়া সত্বেও চেয়ারম্যান সাহেব বিষয় সমূহ ওভারলুক করে থাকেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কমিশনার জানান। এনবিআর সদস্য প্রশাসন মোয়াজ্জেমের এহেন ঘুষ বানিজ্যের ফলে প্রশাসনে চলমান অস্থিরতা নিরসনে ভুক্তভোগী কর্মকর্তাগন প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category