বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ বলেছেন, দেখেন আমি একটা দল করি। এখন আমি যেকোনো একটা কথা বলা একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এথেকে আমি মনে করি যেহেতু এটা বিচারাধীন আছে, এ নিয়ে আমার মন্তব্য করা সঠিক নয়। তবে এই ঘটনাগুলি ঘটেছে এবং মুরাদনগরে আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে।
এই ঘটনার জন্যে আমি দায়ী করব পুলিশ প্রশাসনকে। কারণ তারা মুরাদনগরে গেছে আসিফ মাহমুদের তদবিরে। আসিফ মাহমুদ সাহেব উনাদেরকে তদবির করে নিয়ে গেছেন মুরাদনগরে।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিএনপির এ নেতা।
তিনি বলেন, আগে যারা ছিল, তাদেরকে বদলি করে দিয়ে কুমিল্লার এসপিকে নিয়ে গেছেন। উনারা তো আসিফ মাহমুদকে খুশি করার জন্য যা বলবে তাই করতে থাকবে। আর আসিফ মাহমুদ সাহেব তো বাচ্চা ছেলে, এটা তো অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। আমার নাতির বয়স আর ওর বয়সে তেমন পার্থক্য হবে না।
ছাত্ররা যে কাজটা আমাদের জন্য করেছেন, সারা বাংলাদেশের ছাত্ররা তারা আমার কাছে মাথার তাজ। তাদের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ ছাত্র-ছাত্রী কিন্তু আমাদেরকে এই উপহারটা দিয়ে, স্বাধীনতার উপহারটা দিয়ে তারা তাদের লেখাপড়ায় ফিরে গেছে।
কিন্তু হাতে দুই এক দুই একজন যারা ক্ষমতা প্রাপ্ত বা ক্ষমতার কাছাকাছি তাদের নিয়ে এখন কিন্তু আলোচনাগুলি হচ্ছে। বিশেষ করে আসিফ মাহমুদকে নিয়ে। অন্যদেরকে নিয়ে এত নয়, আমি যতটুক জানি আসিফ মাহমুদের বাবা উনি মাস্টার ছিলেন, এখনো আছেন মাস্টার।
উনি উনার ছেলের জন্য যা করার তাইতো করছেন এটা আপনারা জানেন, শুনেন, দেখেন। তবে জানা শোনার চেয়ে সবচেয়ে বড় জিনিস হলো এগুলি একটা সুষ্ঠ তদন্ত করা।
তিনি আরো বলেন, সুষ্ঠ তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। কারণ সুষ্ঠ তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা যদি না নেওয়া হয় ভবিষ্যতেও যারা আসবে তারাও এরকমটা করতে থাকবে। তো এরা উপদেষ্টা হওয়ার পর থেকেই চেষ্টা করছে আর বিশেষ করে ও যদিও দলে জয়েন করে নাই। কিন্তু সে দলের হয়ে কাজ করছে আর মুরাদনগরের তো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের যে সমস্ত সন্ত্রাস দুষ্কৃতিকারী যাদের কাজ হলো একটা দলে জয়েন করে আকাম কুকাম করে কিছু কামাই করা। তাদের কাছে দলটা বড় জিনিস নয় এখন আওয়ামী লীগ যেহেতু নিষিদ্ধ হয়ে গেছে এখন তারা কোথায় যাবে? এখন তাদেরকে উনারা ব্যবহার করছে।
মুরাদনগরের আওয়ামী লীগ আমাদের স্বাধীনতার পর পর সবাই পালিয়ে গেছিল। যারা সন্ত্রাসী, যারা চাঁদাবাজ যারা দুষ্কৃতিকারী তারা এলাকা থেকে সবাই পালিয়ে গেছিল। কিন্তু দেখা গেল যখন এসপি কুমিল্লা জয়েন করল এবং মুরাদনগরে দুই ওসি নতুন জয়েন করল এবং আসিফ মাহমুদ যখন মানে উপদেষ্টা হলো। তখন তারা আবার এলাকায় ফিরে আসছে। তাদের উপরে ভর করে। তারা এখন মানে কি বলব? মাথা উঁচু করে কথা বলে। তারাই এখন সন্ত্রাস কায়েম করতেছে মুরাদনগরে। তারাই এখন দুর্নীতি করতেছে মুরাদনগরে।
মুরাদনগরে সরকারি যত সাহায্য আসছে ম্যাক্সিমাম সাহায্যই তাদের মাধ্যমে বন্টন করা হয়। তাদের দলকে শক্তিশালী করার জন্য। তাহলে এই প্রশাসন দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কিভাবে আশা করা যায়? যে প্রশাসন একটা পক্ষকে সরাসরি সাহায্য করছে। আর সবচেয়ে বড় জিনিস হলো আপনি যে কথাটা আগে বলেছেন তিন ট্রিপল মার্ডার এটা একটা যঘণ্যতম ঘটনা। এরকমটা কেউ আশা করে না। আমার কথাটা হলো মিডিয়াতে আপনারা অনেক কিছু দেখেছেন, শুনেছেন। আমিও শুনেছি, আমিও দেখেছি। আমার মনে হয় এগুলি তদন্ত হওয়া উচিত। এবং যারা মূল আসামি তাদেরকে কিন্তু এখনো ধরা হয় নাই।
কায়কোবাদ বলেন, কি করেছে পুলিশ? আমাদের বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শাহ আলম উনার বয়স প্রায় ৭০-৮০ বছরের মতো। উনাকে অ্যারেস্ট করেছে। করে এই মামলায় চালান দিয়েছে। আমার বিশ্বাস এটা যদি কেউ তদন্ত করে এই পুলিশ অফিসাররা কি করতেছে এটাই বুঝতে পারবে। যদি সঠিক তদন্ত হয়।
তদন্ত করার মতো সৎ অফিসার প্রয়োজন, এটাই তো নাই। আওয়ামী লীগ তো আওয়ামী লীগ সবাই তো খারাপ না। আওয়ামী লীগ যারা সাধারণ মানুষ ভোট দেয় অনেকে তারা তো খারাপ না। আওয়ামী লীগ কিছু সন্ত্রাসী গ্রুপ আছে, যাদের জন্য আজকে আওয়ামী লীগের এই অবস্থা। এবং আওয়ামী লীগের যিনি নেত্রী ছিলেন উনি তাদেরকে এমনভাবে লালন পালন করেছেন এমনভাবে উৎসাহিত করেছেন যেই লালন পালন এবং উৎসাহিত করার কারণেই তারা এই অপকর্ম করতে পেরেছেন।
এই সন্ত্রাসীরা পুরা সবাই এখন এলাকায় ফিরেছে। সাধারণ আওয়ামী লীগ যারা করে তারা কিন্তু এলাকা থেকে যায় নাই। এই সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছে আমি কি বলব? আমি বললে তো বলবে যে এখন যে আমি যেহেতু একটা দলের একটা প্রতিনিধি, মদদ দিচ্ছে কে এটা তো আপনি বুঝতে পারতেছেন। মদদ কারা দিচ্ছে এটা তো টেলিভিশনে নিউজ আকারে বের হচ্ছে। কারা কিভাবে মদদ দিছে আপনারা বুঝেন, মুরাদনগরের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায় এবং তোলার চেষ্টা করেছে কিন্তু প্রবলেম হলো তারা।
যখনই মুরাদনগর প্রতিরোধ তুলতে চায়, আওয়ামী লীগ যেটা শিখায় দিয়ে গেছে পুলিশ নিয়ে আসে কুমিল্লা থেকে ডিবি নিয়ে আসে কুমিল্লা থেকে। উনি তো আগে একবার বরখাস্ত হয়েছিলেন আমি শুনেছি। তবে এমনটা তো করে নাই এখন যা হচ্ছে তা তো করে নাই। মানে আগে উপদেষ্টা হওয়ার আগে তো উনি এমনটা করে নাই, এখন যা করতেছেন। স্কুলের নানা হওয়া অনিয়মের জন্য উনি বরখাস্ত হয়েছিলেন। এটা ছাড়া আমার জানামতে আর কিছু নাই। এগুলি জানতে হলে আপনারা সরাসরি মুরাদনগরে যান। মুরাদনগরে গেলে আসল চিত্রটা পেয়ে যাবেন।
উনি তো এখন আমি দুই একটা কথা বলেছি এটা নিয়ে দেখবেন আরেকটা উনি উল্টা বলবেন। তার চেয়ে বেটার হলো আপনারা এলাকায় যান। গোপনে তদন্ত করেন, তদন্ত করে আসল জিনিসগুলি বের করে নিয়ে আসতে পারবেন। এরকম অবস্থা মানে আওয়ামী লীগের সময় হয়েছে, কিন্তু এমনটা যে অবস্থা মুরাদনগরে এমনটা আওয়ামী লীগের সময় হয় নাই। আওয়ামী লীগের সময় আমার উপরে জুলুম হইছে, আমার নেতাকর্মীদের উপরে জুলুম হয়েছে। তারা মামলা মোকদ্দমা অনেক কিছু হয়েছে, কিন্তু যেই বিরোধিতা করবে তাকেই মামলায় দিতে হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এমনটা ছিল না।
ওরা পার্টিকুলার কিছু লোকের বিরুদ্ধে যেমন আমাদের বিশেষ করে যারা যারা ভালো নেতাকর্মী তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলখানায় পুরতো। আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, এখন কিন্তু হলো কি যে যেই হোক তার বিরুদ্ধে মামলা। যেমন আমাদের সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা হইছে। একটা মিথ্যা মামলা হয়েছে মিথ্যা মামলা। এই মামলায় হাইকোর্টে অনেকদিন ঘুরার পরে আল্লাহর রহমতে বেল হইছে। আবার জজ কোর্টে যখন গেল জজ সাহেব মেহেরবানী করে কি বলব উনি মনে করছেন যে বেল দেওয়া ঠিক হবে না। উনি বেল দেয় নাই।
কিন্তু হাশরের ময়দানে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সে বিচারক হোক আর যে হোক যে একটা মানুষকে অযথা যদি কষ্ট দেওয়া হয় এটা আমি বিশ্বাস করি। আমার নেতাকর্মী নিরপরাধ তাদেরকে যেভাবে জেলখানায় পোরা হয়েছে এটার জবাব আল্লাহর কাছে দিতে হবে। এটার বিচার দুনিয়াতে আল্লাহ তাদেরকে করবেন। বিনা বাতাসে উড়ে না। এটা কথার কথা। জনগণের যে কথা এটাই সত্য হয়।
বিনপির এ নেতা বলেন, এলাকায় গিয়ে একটু দেখেন দেখলে সব জানতে পারবেন। কারণ আমাকে আমার পক্ষে অনেক কিছুই সত্য ঘটনাগুলো বলা আমার পক্ষে একটু অসুবিধা। কারণ ৯১ থেকে ৯৬ সালের মধ্যে একটা সময়ে আমাকে ব্রাশ ফায়ার করা হয়েছিল। আমার গাড়ির উপরে কম্পানি জুমারের রাস্তায় আমাকে মেরে ব্রিকফিল্ডের আগুনে পুড়ায় দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। আল্লাহ আমাকে হেফাজত করেছেন।
ওই লোকেরই এখন তাদের সাথে আছে। তো ওদের চিন্তাভাবনা কেমনটা হতে পারে এখন বুঝেন। তাদেরকে বেছে বেছে নেওয়া হয়েছে ওই দলে আমাকে প্রতিহত করার জন্যে, আমাকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু পারবে না, তো আল্লাহর রহমত যে আল্লাহ আমাকে এইভাবে বাংলাদেশে নিয়ে আসছেন, মামলা থেকে মুক্ত করেছেন। হাসিনাকে বিদায়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমার আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট।