ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স নিতে হলে এখন থেকে আর আগের মতো সহজে হবে না। সরকার নতুন করে কিছু নিয়ম-কানুন বেঁধে দিয়েছে, যেটা সাধারণ আগ্রহী নাগরিকদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
সর্বশেষ খবর পেতে ঢাকাপ্রকাশ এর গুগল নিউজ চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন ।
পিস্তল, রিভলবার কিংবা রাইফেলের মতো আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিতে হলে এখন আবেদনকারীকেই আয়কর অফিসে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দেখাতে হবে। শুধু কর দিলেই হবে না, সেটা যেন কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা হয়—আর তা পরপর তিন বছর ধরে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় বড় পরিবর্তন এনেছে। ১০ জুলাই জারি হওয়া সংশোধিত এই নীতিমালায় বলা হয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ও নবায়নে আগে যে শর্ত ছিল, তার চেয়ে এখনকার নিয়ম অনেক কঠিন। আগে যেখানে পিস্তল বা রিভলবারের লাইসেন্সের জন্য তিন লাখ টাকার আয়কর দেখালেই চলত, এখন সেটা বেড়ে হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। শটগানের ক্ষেত্রেও বাড়তি করের চাপ, আগে যেখানে এক লাখ টাকা কর দেখালেই চলত, এখন দিতে হবে প্রতি বছর দুই লাখ করে তিন বছর।
শুধু কর নয়, লাইসেন্স ফিতেও এসেছে বড় পরিবর্তন। পিস্তল ও রিভলবারের লাইসেন্স ফি যেখানে আগে ছিল ৩০ হাজার, এখন সেটাই হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। বন্দুক, রাইফেল কিংবা শটগানের লাইসেন্স নিতে হলে এখন গুনতে হবে ৪০ হাজার টাকা—আগে যা ছিল মাত্র ২০ হাজার। নবায়নের ক্ষেত্রেও ফি দ্বিগুণ হয়েছে। পিস্তলের ক্ষেত্রে আগে ১০ হাজার টাকা দিলেই হতো, এখন সেটা ২০ হাজার। শটগান বা রাইফেলেও খরচ বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার টাকা।
এই বাড়তি শর্ত শুধু সাধারণ নাগরিকদের জন্য নয়—অস্ত্র ব্যবসা বা ডিলারদের জন্যও লাইসেন্স ফি দ্বিগুণ হয়েছে। আগে যেখানে ২০ হাজার টাকায় কাজ হয়ে যেত, এখন দিতে হবে ৪০ হাজার টাকা। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য লাইসেন্স ইস্যুর ফি বেড়ে হয়েছে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যও শর্ত কঠিন—তাঁদের লাইসেন্স পেতে হলে বৈধভাবে প্রেরিত রেমিট্যান্সের হিসাব দিতে হবে, তাও প্রতি বছর ১২ লাখ টাকা করে তিন বছর। পাশাপাশি বিদেশে আয়কর দেওয়ার কাগজপত্রও জমা দিতে হবে।
তবে সব শ্রেণির জন্য এই কঠিন নিয়ম নয়। বিশেষ কিছু শ্রেণির নাগরিকরা এই কঠোরতার বাইরে থাকছেন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সিটি করপোরেশনের মেয়র, ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভার মেয়র, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা কিংবা যারা জাতীয় পর্যায়ে সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া বা গবেষণায় অবদান রেখেছেন—তাদের জন্য এই কর বাধ্যতামূলক নয়। এমনকি সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে জাতীয় বেতন স্কেলের ষষ্ঠ গ্রেড বা তদূর্ধ্ব গ্রেডে চাকরিরত বা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও এই সুবিধা পাবেন।
নীতিমালায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত হয়েছে। কেউ যদি কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত থাকেন, তাহলে তাকে আর লাইসেন্স দেওয়া হবে না। এমনকি কেউ আদালতের রায়ে দণ্ডিত হলে, তার সাজা শেষ হওয়ার পরও পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
সরকার বলছে, এই নতুন নিয়মগুলো চালু করা হয়েছে মূলত আগ্নেয়াস্ত্রের অপব্যবহার কমাতে এবং কারা লাইসেন্স পাওয়ার উপযুক্ত, তা নিশ্চিত করতে। ফলে শুধু অস্ত্রের প্রয়োজন থাকলেই হবে না, থাকতে হবে আর্থিক স্বচ্ছতা এবং আইনি প্রেক্ষাপটও পরিষ্কার।