সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর প্রায় ১ বছর ২ মাস ধরে আটকে থাকা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৫ জন সহকারী প্রকৌশলী (পুর) এর প্রজ্ঞাপন প্রকাশ ও নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য মানববন্ধন করেছে সুপারিশপ্রাপ্ত ২৫ জন সহকারী প্রকৌশলী (পুর) বাপাউবো।
সোমবার (৭জুলাই) সকালে পান্থপথ পানি ভবন সামনে মানোবন্ধন করেন সুপারিশপ্রাপ্ত ২৫ জন সহকারী প্রকৌশলী।
নিয়োগ প্রত্যাশীরা বলেন, আজ আমরা এখানে এসেছি একটি গভীর হতাশা, ক্ষোভ এবং ন্যায্য দাবির স্বপক্ষে দাঁড়াতে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক গত (১৮ অক্টোবর) ২০২৩ তারিখে সহকারী প্রকৌশলী (পুর) পদে ১১১ জনের একটি নিয়োগ সার্কুলার প্রকাশিত হয়। লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার পর গত (৬ মে) ২০২৪ তারিখে আমরা ১১১ জন সুপারিশপ্রাপ্ত হই। এরপর (৯ ডিসেম্বর) ২০২৪ তারিখে ৮৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হলেও, ২৫ জনকে কোন কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে পুনঃতদন্তে পাঠানো হয়। দীর্ঘ ৪ মাস পর, (৮ এপ্রিল) ২০২৫ তারিখে আমাদের পুনঃতদন্তে রিপোর্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড যেখানে অন্যান্য বার সময় লাগে সর্বোচ্চ ২ মাস। আজ (৭ জুলাই) পুনঃভদন্ত শেষ হওয়ার পর ৩ মাস পার হয়ে গেলেও এখনও আমরা কোনো নিয়োগ আদেশ পাইনি, ফলাফল পাইনি- অথচ আপনারা জানেন গত ৩ মার্চ ২০২৫ তারিখে পানি উন্নয়ন বোর্ড নতুন করে ৫০ জন সহকারী প্রকৌশলী (পুর) পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, পূর্ববর্তী ২৫ জন সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীকে নিয়োগ না দিয়েই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে- এটি কেবল অস্পষ্টতা নয়, চরম অবিচার।’
তারা আরো বলেন, এখানে আমরা ৪৩তম বিসিএস এর উদাহরণ দিতে চাইঃ ৪৩তম বিসিএসে ২২৭ জন ক্যাডার পদে সুপারিশ প্রাপ্ত প্রার্থীকে পুনঃতদন্তে পাঠানো হয় গত জানুয়ারি মাসে এবং তাদের পুনতদন্তের ফলাফল জানানো হয় (২০ মে) ২০২৫ তারিখ। অর্থাৎ মাত্র সাড়ে চার মাস সময় লাগে।
এদিকে আমাদের পুনঃতদন্ত শুরু হয় (২০ নভেম্বর) ২০২৪ তারিখে। আমাদের সংখ্যা মাত্র ২৫ জন যা বিসিএসের প্রার্থীদের তুলনায় নয় ভাগের এক ভাগ মাত্র এবং আমাদের পদগুলো কোনো ক্যাডার পদও নয়। অথচ আজ ৭ জুলাই, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে সাত মাস পার হবার পরও আমাদের ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি এবং নিয়োগ কার্যক্রমেরও কোনো অগ্রগতি নেই।
এই দীর্ঘসূত্রতা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয় এটি মানবিক বিপর্যয়। আমাদের অনেকে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছেন। আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন কয়েকজন। পরিবারের চাপ, সামাজিক হেয়প্রতিপন্ন এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা আমাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে।
আজ প্রায় ১ বছর ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে আমরা অপেক্ষমাণ। এ সময়ের মধ্যে চাকরির বয়সসীমা পেরিয়ে গেছে কারও কারও। আমরা উপযুক্ত হয়েও নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়ে বেকার জীবনযাপন করছি। মাননীয় পানি সম্পদ উপদেষ্টা, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেও আমরা কোনো ফলাফল পাইনি। পানি সম্পদ মন্ত্রালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে এই সপ্তাহে সিদ্ধান্ত আসবে, এই মাসে সিদ্ধান্ত আসবে, এসব বলে মাসের পর মাস আমাদের সাথে প্রহসন চালানো হচ্ছে।
আমরা জানতে চাই ভেরিফিকেশন রিপোর্ট পাওয়ার ৩ মাস পরেও কেন এখনো এই ২৫ জন প্রার্থীর ফলাফল প্রকাশিত হয়নি? নিযোগ কার্যক্রম থেমে থাকার কারণ কী? নতুন নিয়োগ বিজ্ঞস্তি কীভাবে দেওয়া হলো পুরাতন নিয়োগ শেষ না করে? ৩য় কোনো পক্ষের চাপে কি প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে? আমাদের পদগুলো কি গোপনে অন্য কাউকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে? নিযোগে বিলম্বের বিষয়ে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
আজকের এই মানোবন্ধনের মাধ্যমে আমরা অনতিবিলম্বে আমাদের নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এবং মাননীয় পানি সম্পদ উপদেষ্টা মহোদয় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সদয়, সক্রিয় ও সময়োপযোগী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।