নিম্ন আদালতে আইনী জটিলতা থাকায় পাবনা শহরে ইছামতি নদী খনন কাজ ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে শহরের মধ্যে ৫কিলোমিটার নদী নিয়ে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে। একের পর এক নিম্ন আদালতে মামলা হচ্ছে, সাথে যুক্ত হয়েছে আদালতের নিষেধাজ্ঞা। ফলে পাবনা শহরের এই ৫ কিলোমিটার ইছামতি নদী খনন বেছে বেছে চলছে অর্থাৎ আদালতের নিষেধাজ্ঞা এলাকা বাদ রেখে খনন কাজ চলমান রয়েছে।
গত ০১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ইছামতি নদীর এই ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নকরণ, খনন এবং অপসারণ কাজ। সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, শহরের মোট চারটি পয়েন্টে এই পরিস্কারকরণ, খনন এবং অপসারণ কাজ চলছে। এই চারটি পয়েন্ট হলো- সিংগা শ্মশান ঘাট, সিংগা রেলব্রিজের উত্তর পাশ, সিংগা বিশ্বরোড ব্রিজের দক্ষিণ পাশ থেকে কাজী আলমের মসজিদ, এবং আটুয়া-কৃষ্ণপুর এলাকা। এই কাজে সর্বমোট ২০টি এস্কেভেটর এবং প্রায় অর্ব শতাধিক ময়লাবাহী ট্রাক কাজ করছে। পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শুধাংসু কুমার সরকার প্রতিবেদককে জানান, শহরের ৫ কিলোমিটার নদীর মধ্যে সাড়ে তিন কিলোমিটার নদী খুব দ্রুতই পরিস্কারকরণ এবং খনন কাজ সমাপ্ত হবে। যে যে জায়গায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে সেখানে বাদ রেখে বাকি জায়গাগুলোতে কাজ চলছে।
এমএস আহাদ বিল্ডার্সের প্রজেক্ট ম্যানেজার সাইদুল আলম প্রতিবেদকে জানান, বর্ষা মৌসুমেও নদী খনন কাজ চলমান থাকবে। সুতিখালী চ্যানেলে ১৮টি ভেক্যু, ইছামতি নদী একদন্ত এলাকায় ০৮টি এবং গয়েশপুর এলাকায় ০৭টি ভেক্যু বর্তমানে নদী খনন কাজ করছে।
তবে শহরে নদী খনন নিয়ে লোয়ার কোর্টে মামলা জটিলতা থাকায় খনন কাজ ধীরগতি হলেও পরিস্কারকরণ এবং ময়লা-আবর্জনা অপসারণ কাজ চলমান রয়েছে। এদিকে গত ০৫ জুলাই বাংলাদেশ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম পাবনা ইছামতি নদী পর্যবেক্ষণে আসেন এবং তিনি সরেজমিনে পাবনা শহরে সিংগা শ্মশাণ ঘাট থেকে ইছমতি নদীর ভোমরা কোল পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে দেখেন। শেষে পাবনা জেলাপ্রশসকের সম্মেলন কক্ষে নদীর স্টেকহোল্ডারগণের সাথে কথা বলেন।
এতে আশার আলো দেখছেন পরিবেশ ও নদীকর্মীগণ। ইছামতি খনন ও মামলা জটিলতা নিয়ে ‘ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন পাবনা’র সভাপতি এসএম মাহাবুব আলম প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের স্মারকলিপির প্রেক্ষিতে গত ০৯ এপ্রিল পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারি মাহ্ফুজা আক্তার ইছামতি নদী নিয়ে নিম্ন আদালতে মামলা জটিলতা নিরশনে পাবনা আসেন। তিনিও নিম্ন আদালতের এই চলমান মামলাগুলো নিরসনকল্পে স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলেন এবং মামলার নথিপত্র মন্ত্রণালয়ে নিয়ে যান।
তিনি পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একজন আইনজীবি নিয়োগরও তাগাদা দিয়ে যান। সর্বপোরি কথা হলো পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ইছামতি নদী খননের ব্যাপারে সর্বদা সজাগ আছেন এবং আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা মনে করি, মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ থাকায় আশা করা যাচ্ছে লোয়ার কোর্টের মামলা; এবং নিষেধাজ্ঞা খুব দ্রুতই নিষ্পত্তি হবে এবং শহরে ইছামতি নদী খনন, উচ্ছেদ, অর্থাৎ আনুষাঙ্গিক আরো কর্মযজ্ঞ পুরোদমে শুরু হবে।
এদিকে বিশ্বস্ত সূত্র হতে জানা গেছে, ইছামতি নদীর এই মেগা প্রকল্পের মধ্যে ২৩টি ব্রিজ নির্মাণ/পুনঃনির্মাণ কাজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। ব্রিজগুলো ডিজাইনের কাজ চলমান রয়েছে এবং বর্তমানে সয়েল টেষ্ট চলছে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো ব্রিজের সয়েল টেষ্ট হয়ে গেছে। বাকিগুলোর কাজও খুব দ্রত সম্পন্ন হবে বলে আশা যায়।
তবে ব্রিজের ডিজানই হাতে পেলেই ব্রিজের কাজ শুরু হবে বলে।উল্লেখ্য, ইছামতি নদী পুনরুজ্জিবীতকরণ মেগা প্রকল্পের মধ্যে নদী খনন কাজ ১১০কিলোমিটার, শহরে নদীর উভয় তীরে ১০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ, রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ, ব্লক ফেলা, জ্রেনেজ নির্মাণ, ৫৬টি ঘাটলা নির্মাণ এবং ৪২ হাজার ৩১০টি বৃক্ষরোপণ করে শোভাবর্ধনের কাজ রয়েছে।
নদী খননে সার্বিক স্লোপ ধারা হয়েছে সর্বনিম্ন ১১.৫ মিটার। ইছামতি নদীর সকল জায়গায় জলা ধরা হয়েছে সর্বনিম্ন ২৫.৭ মিটার। তবে সিএস মনচিত্রে নদীর জায়গা কোথাও প্রসস্থ থাকলে সেখানে জলাও বেশি হবে। ইছামতি নদী এই প্রকল্পের কাজকে মোট ছয়টি স্লটে ভাগ করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমএস আহাদ বিল্ডার্স খনন কাজ করছেন এবং তত্ত্বাবধান করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। কাজের শেষ সীমা ধরা হয়েছে ৩১ মার্চ ২০২৭ খ্রি. পর্যন্ত। ইছামতি নদী পুনরুজ্জিবীতকরণ এই মেগা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা।