পাবনায় অপহৃত শিশু উদ্ধার ও অপহরণকারীদের শাস্তির দাবিতে মানবাধিকারের সংবাদ সম্মেলন

পাবনায় ভিক্ষাবৃত্তি করানো অবস্থায় অপহৃত শিশু উদ্ধার ও অপহরণকারীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা পাবনা জেলা শাখা।

শনিবার দুপুর ১২ টায় পাবনা মেরিল বাইপাস এলাকায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা পাবনা জেলা সভাপতি নূর আলমের সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিনের সঞ্চালনায় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাসান মাহমুদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের
সাবেক কাউন্সিল আইয়ুব আলী সরদার।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান কালে বক্তারা বলেন এই জঘন্য ঘটনা আমাদের সমাজে অহরহই ঘটছে যার সবকিছু আমরা জানতে পারি না। আর যেন কোন মা তার সন্তানকে এভাবে না হারিয়ে ফেলে তার জন্য এই চক্রের সকলকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানায় তারা।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২ অক্টোবর পাবনা সদরের পৌর এলাকার চকছাতিয়ানী মহল্লার আমিনুল ইসলামের ছেলে সোয়াইব হোসেন (৬) কে অপহরণ করে সদরের হেমায়েতপুর ইউনিয়নে শানিকদিয়ার গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে আসামী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বিপ্লব (৩০)। সোয়াইবের মা সোহানা জাহান এর সাথে বিবাদী রফিকুল ইসলাম বিপ্লবের পূর্ব থেকে পরিচয় ছিল। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে রফিকুল ইসলাম বিপ্লব ঐদিন সোহানার সাথে দেখা করতে যায়।

এ সময় ভিকটিম তার মায়ের সাথে ভিকটিমের বাসার পাশে চক ছাতিয়ানি গোরস্থানের পাশে খেলা করছিল । এ সময় ভিকটিম শিশুকে খাবার কিনে দেওয়ার কথা বলে বিবাদী রফিকুল ইসলাম বিপ্লব ভিকটিমের মায়ের কাছ থেকে সোয়াইব হোসাইনকে নিয়ে চলে যায়। ছেলে ফিরে না আসায় তার মা সোহানা জাহান বিবাদী রফিকুল ইসলাম এর ফোনে বারবার ফোন করার চেষ্টা করে কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় কথা বলতে পারেননি তিনি। ভিকটিমের মা আশপাশ এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে তার ছেলেকে না পেয়ে গত বছরের ৭ অক্টোবর পাবনা সদর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি (জিডি নং-৫৫৩, তারিখ- ০৭-১০-২০২৪) করেরন। উক্ত জিডির তদন্তকারী অফিসার হিসেবে এসআই নিরস্ত্র মো: জাকারিয়া হাওলাদার সদর থানা পাবনাকে নিযুক্ত করেন।

এরপর এসআই জাকারিয়া হাওলাদার উক্ত জিডির তদন্তভার গ্রহন করে সোয়া‌ইবকে উদ্ধার করার জন্য তার মা সোহানার সাথে কথা বলে রফিকুল ইসলাম বিপ্লবের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে বিবাদীর লোকেশন আইডেন্টিফাই করার জন্য চেষ্টা করে।

বিপ্লব তার ফোন দীর্ঘদিন বন্ধ রাখে এবং বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে থাকে। মাঝেমধ্যে ফোন চালু রাখায় জিডি তদন্ত জারী অফিসার এসআই জাকারিয়া হাওলাদার ফোন কল লিস্ট সংগ্রহ করেন। বিবাদীর ফোন কল লিস্ট এনালাইস করে জানতে পারে বিপ্লব গোপালগঞ্জ জেলা ও খুলনা জেলার আশেপাশে জনবহুল এলাকায় অবস্থান করছে। এস আই জাকারিয়া বিশ্বস্ত সোর্স নিয়োগ করে এবং খুলনা জেলা শহরের বিভিন্ন জনবহুল এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন।

এরই ফলশ্রতিতে চলতি মাসের ১৮ এপ্রিল গোপন সংবাদের মাধ্যমে এলাকার জনগণ ও রূপসা ফেরিঘাট ফাঁড়ি পুলিশের সহায়তায় রূপসা ফেরিঘাট এলাকা থেকে ভিকটিম র্শিশুটিকে দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করানো অবস্থায় শিশু ভিকটিম সোয়াইবকে উদ্ধার এবং আসামী রফিকুল ইসলাম বিপ্লবকে আটক করে রূপসা ফেরিঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। রূপসা পুলিশ ফাঁড়িতে ভিকটিমের শারীরিক অবস্থা দেখে এবং ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় বিবাদী রফিকুল ইসলাম বিপ্লব কৌশলে ভিকটিমকে অপহরণ করে নিয়ে গোপালগঞ্জ জেলা সহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে।

ভিকটিমকে মারধর করে হাতের নখ প্লাস দিয়ে উপড়ে ফেলে, সারা শরীরে দাঁতের কামড় বসিয়ে সিগারেটের ও জ্বলন্ত কয়েল দ্বারা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পুড়িয়ে ভিকটিম শিশুটিকে দিয়ে প্রতিবন্ধীর মতো করে ভিক্ষাবৃত্তি করাতো অপহরণকারী পাষন্ড বিপ্লব। আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। বর্তমানে ভিকটিম সোয়াইব হোসাইন (৬) পাবনা জেনারেল হাসপাতালে অর্থোপেডিক বিভাগের ২৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আছে।

উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে অপহরণকারীর দ্রুত সাজা নিশ্চিত করনে জোর দাবিতে জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা পাবনা জেলা শাখা।