জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বর্তমানে যে রাজনৈতিক সংকট ও নিঃসঙ্গতার মধ্যে রয়েছে তা পুরোপুরি বাইরের চাপ নয়—বরং এর বড় একটি অংশ তারা নিজেরাই তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ। চট্টগ্রামে এনসিপির দলীয় কর্মসূচিকে ঘিরে দলটির প্রধান নাহিদ ইসলামের ‘আমরা অনেক ডিফিকাল্টির মধ্যে আছি’ বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘এনসিপির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কৌশল, উসকানিমূলক ভাষা ও ভুল সিদ্ধান্তগুলো তাদের এই অবস্থার জন্য অনেকটাই দায়ী। জনগণের ভালোবাসা ছিল, গণজোয়ারও হয়েছিল—তবু আজ কেন তারা একঘরে হয়ে পড়ল, সেটাই বড় প্রশ্ন।
’
রবিবার (২০ জুলাই) সকালে চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকার মোটেল সৈকতে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন এনসিপির নেতাকর্মীরা। এ সময় দলটির প্রধান নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখন অনেক ডিফিকাল্টির মধ্যে আছি। নানা স্থানে আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। গোপালগঞ্জে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে।
আমরা আপনাদের দোয়া চাই।’
এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিটা কেন হবে? গোপালগঞ্জে যা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু ৫ আগস্টে গণজোয়ারে মানুষের যেভাবে সাড়া ছিল, তাতে তো এমন হওয়ার কথা না। সেই ভালোবাসা সত্ত্বেও আজ এনসিপি কেন এমন একঘরে হয়ে পড়েছে?’
তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন।
সেখানে এনসিপির জনশক্তি, সাংগঠনিক প্রস্তুতি বা অন্য দলগুলোর সমর্থন ছিল না। এমনকি বিএনপি বা জামায়াতেরও উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল না। এনসিপির কিছু নেতার উসকানিমূলক বক্তব্য—মুজিববাদ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটু মন্তব্য—রাজনৈতিকভাবে বেমানান ও অপ্রয়োজনীয় ছিল। এতে গোপালগঞ্জে সংকট আরো গভীর করেছে।
তিনি আরো বলেন, “কক্সবাজারে এনসিপির এক নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে ‘গডফাদার’, ‘চাঁদাবাজ’ বলে আক্রমণ করেছেন।
এতে বিএনপিকে কার্যত আওয়ামী লীগের সমতুল্য বানিয়ে ফেলা হয়েছে—যেটা রাজনৈতিকভাবে খুব অবুঝ ও বিপজ্জনক কৌশল।”
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, “আজ তারা বলছে ‘আমরা অনেক ডিফিকাল্টির মধ্যে আছি।’ কিন্তু এটা পুরোপুরি বাইরের চাপ নয়—এর অনেকটা তাদের নিজের কর্মকাণ্ড, কৌশল ও ভুল সিদ্ধান্ত থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।”
দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এখন তাদের অবস্থা এমন—চট্টগ্রামে যেতে হচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও মিডিয়া প্রটেকশনের ভেতর দিয়ে। এটা খুবই দুঃখজনক। জনগণের শক্তির বদলে আজ তারা নির্ভর করছে সরকারি কাঠামোর নিরাপত্তার ওপর।’
ফিরোজ বলেন, যে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল সেটি ছিল একটি সম্মিলিত আবেগ। সে আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেকেই বিএনপি, জামায়াত বা অন্যান্য দলের মানুষ ছিল। কিন্তু আন্দোলনের পর তারা নিজেদের ঘরে ফিরে গেছে। এনসিপি তখন দল করল, অথচ সেই ঢেউটাকে ধরে রাখতে পারল না।