নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার এক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন সময় পেটের ভেতর ১৮ ইঞ্চি ‘মপ’ কাপড় রেখে সেলাই দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার ১৬ দিন পর ৩ জুলাই ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার করে ওই নারীর পেট থেকে কাপড়ের টুকরা বের করা হয়। তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছে চিকিৎসক।
এ ঘটনায় ওই নারীর ভাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নরসিংদী জেলা সিভিল সার্জন সৈয়দ মো. আমিরুল হক শামীম।
ভুক্তভোগী মোসা. লিমা আক্তার (২৮) শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের দত্তেরগাঁও মির্জাকান্দি এলাকার রহিম মিয়ার স্ত্রী। তিনি ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত রাজ-খালেদা মেমোরিয়াল ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৭ জুন লিমার প্রসব বেদনা উঠলে তাকে নরসিংদী সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিমা এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। অস্ত্রোপচার করান ওই হাসপাতালের চিকিৎসক শিউলি আক্তার।
২১ জুন দুপুরে লিমাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বাড়ি ফেরার পর তিনি পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। পরে সিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভুক্তভোগী নারীর ভাই জহিরুল ইসলাম।
এ অবস্থায় ২৫ জুন ভুক্তভোগী নারীকে একই হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তবে সেখানে কিছুই ধরা পড়েনি। পরে তাকে নরসিংদীর অপর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে লিমাকে দেখে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক। তার পেটে কিছু একটা রয়েছে জানান তিনি।
পরে স্বজনরা লিমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করেন। সেখানে পর্যাপ্ত সেবা না পেয়ে তাকে ঢাকার রাজ-খালেদা মেমোরিয়াল ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা শেষে লিমার পেটে রক্ত পরিষ্কার করা ‘মপ’ (কাপড়) রয়েছে বলে নিশ্চিত হন চিকিৎসকরা। তাকে দ্রুত অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেয় তারা।
৩ জুলাই রাতে চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এইচ এম শাখাওয়াত হোসেন অস্ত্রোপচার করে ওই নারীর পেট থেকে প্রায় ১৮ ইঞ্চি কাপড়ের (মপ) টুকরো বের করেন।
ভুক্তভোগী নারীর বড় ভাই জহিরুল ইসলাম বলেন, সিজারিয়ান অপারেশনের পর থেকে তার বোন মৃত্যু পথযাত্রী। পেটে ইনফেকশন হয়েছে; এখনো পেট ফুলে আছে। দুর্গন্ধ বের হওয়াসহ ব্যথায় কাতরাচ্ছে।
“দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে মিলিয়ে পাঁচ দিন তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হয়েছে। এখনো সে সংকটাপন্ন। নবজাতক মায়ের সেবা এবং বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত। সেও ঝুঁকিতে আছে।”
ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে নরসিংদীর সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া পারিবারিক সিদ্ধান্তের পর মামলা করার কথাও জানিয়েছেন জহিরুল ইসলাম।
বিষয়ে জানার পর রোগীর খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে জানিয়ে নরসিংদী সিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন মিয়া বলেন, “রোগীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। দেড় লাখ টাকায় সমঝোতা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা আরও বেশি টাকা চান।
“ভুল করে ঘটনাটি ঘটেছে; সেটিতো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আমরা রোগীর চিকিৎসার দায়িত্বও নেওয়ার কথা বলেছি।”
এ বিষয়ে কথা বলতে লিমার প্রথম অস্ত্রোপচার করা চিকিৎসক শিউলি আক্তারের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলে, তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
সিভিল সার্জন আমিরুল হক শামীম বলেন, “এ রকম জঘন্য ভুল হতে পারে না। শুনেছি রোগী সংকটাপন্ন। রোগীর জীবন বিপন্ন করে এত বড় ময়লা পরিষ্কার করার কাপড় পেটে রেখে সেলাই করে কীভাবে? এর প্রতিকার দরকার।”
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন।