• বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন
  • |
  • |
Headline :
ফের সচিবালয়-যমুনা এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ নলছিটিতে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধের আলটিমেটাম জুলাই ঐক্যের শ্যামনগরে স্টুডেন্ট প্রোগ্রামে এ জনপদের লবনাক্তা মানুষের কথা শুনলেন জেলা প্রসাশক নতুন সরকারের মন্ত্রীদের জন্য কেনা হচ্ছে ৬০ মিতসুবিশি পাজেরো নলছিটিতে পাইলট কর্মসূচীর অবহিতকরণ সভা গোবিপ্রবিতে পাঞ্জেগানা মসজিদের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন ‘হুট করে একদিন চাকরি নাই, দুই-তিন মাস বাড়িতে বসে থাকা তো মানসিকভাবে বিরাট আঘাত’ জিএম কাদের ও তার স্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা শ্রমিকদের ২৩ দফা মেনে নিলেন কতৃপক্ষ, কাজে ফিরলেন উত্তরা ইপিজেডের শ্রমিকরা

নতুন সরকারের মন্ত্রীদের জন্য কেনা হচ্ছে ৬০ মিতসুবিশি পাজেরো

স্পষ্টবাদী ডেস্ক / ২৫ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
নতুন সরকারের মন্ত্রীদের জন্য কেনা হচ্ছে ৬০ মিতসুবিশি পাজেরো
নতুন সরকারের মন্ত্রীদের জন্য কেনা হচ্ছে ৬০ মিতসুবিশি পাজেরো

আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ৬০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসি মডেলের প্রতিটি গাড়ির দাম এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এসব গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে ১০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন এমন কর্মকর্তাদের জন্য কেনা হচ্ছে ১৯৫টি পাজেরোসহ মোট ২২০টি গাড়ি। সব মিলিয়ে ২৮০টি গাড়ি কিনতে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৪৪৫ কোটি টাকা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ২১ আগস্ট নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং আগামী নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ২৮০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে পাঠায়। এর মধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে জয়ী সরকারের মন্ত্রী, মন্ত্রী পদমর্যাদার উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের জন্য ৬০টি গাড়ি কেনার কথা বলা হয় প্রস্তাবে।

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় এসব গাড়ি কিনবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর।

প্রস্তাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা সমপদমর্যাদার ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য সরকারি পরিবহন ‍পুলে যথাযথ মানের গাড়ি নেই। বর্তমানে উপদেষ্টারা যেসব গাড়ি ব্যবহার করছেন, সেগুলো ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কেনা। এগুলো প্রায়শ মেরামত করতে হয়, যা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।

বিদ্যমান গাড়িগুলো দিয়ে ভবিষ্যতে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদের পক্ষে নির্বাচনী এলাকা সফর, উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনসহ অন্যান্য জরুরি কাজ করা কষ্টসাধ্য হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ প্রস্তাবে সম্প্রতি সম্মতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

এরপর সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ এবং সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে এসব গাড়ি কেনা হবে।

এদিকে আগামী নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য প্রতিস্থাপক হিসেবে ১৯৫টি মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসি মডেলের জিপ এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জন্য ২৫টি মাইক্রোবাস কেনায় সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এ ক্ষেত্রেও প্রতিটি জিপের দাম ধরা হয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। প্রতিটি মাইক্রোবাসের দাম পড়ছে ৫২ লাখ টাকা। এ ধরনের ২২০টি গাড়ি কিনতে সরকারকে খরচ করতে হবে ৩৪৩ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে যানবাহন অধিদপ্তরের অনুকূলে মোটরযান ক্রয় খাতে ৩২৮ কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে এই ২৮০টি গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে ৪৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বাড়তি ৯৬ কোটি ৫১ লাখ ৫ হাজার টাকা অন্য খাতের অর্থ ব্যয়েরও অনুমোদন দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

তবে গাড়ি কেনার সম্মতিপত্রে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। শর্তগুলো হলো– নতুন কেনা জিপগুলো প্রাধিকারভুক্ত হবে। একই সঙ্গে প্রতিস্থাপক হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের জন্য কেনা জিপ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জন্য প্রতিস্থাপক হিসেবে মাইক্রোবাসগুলো অকেজো ঘোষণা-সংক্রান্ত বিআরটিএর পরিদর্শক দলের অনুমোদন গ্রহণ করে তার অনুলিপি অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।

গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ অনুসরণ করতে হবে।

চলতি অর্থবছরে যানবাহন কেনার ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ নিতে একটি পরিপত্র জারি করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। এই পদক্ষেপে তা উপেক্ষিত হলো।

গত ৮ জুলাই জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের নতুন যানবাহন কেনা বন্ধ থাকবে। তবে পরিচালন বাজেটের আওতায় প্রাধিকারভুক্ত কোনো সরকারি কর্মকর্তার ব্যবহৃত গাড়ি ১০ বছরের বেশি পুরোনো হওয়ায় ব্যবহারের অযোগ্য হলে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে গাড়ি কেনা যেতে পারে।

সরকারের পরিবহন পুলের হিসাবমতে, গত সরকারের মন্ত্রীদের জন্য কেনা যে গাড়িগুলো রয়েছে সেগুলো ৯ বছরের পুরোনো। এ ক্ষেত্রেও পরিপত্রের শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিয়ে অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারেরও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, গত ৬ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আগামী মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য গাড়ি কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, মন্ত্রীদের গাড়িগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। এ জন্য নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পরবর্তী সরকার বা মন্ত্রীরা কী গাড়ি ব্যবহার করবেন, কী গাড়ি কিনবেন; তার সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকার কেন নিচ্ছে? এটা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়।

এর মাধ্যমে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপের পরিপত্র উপেক্ষা করা তো বটেই, একই সঙ্গে প্রশ্ন আসবে, পরবর্তী সরকারের জন্য গাড়ি কেনার দায়িত্বটা অন্তর্বর্তী সরকারকে কে দিয়েছে?

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের ‘ম্যান্ডেট’ এটা নয়। এ দায় তারা কেন নিচ্ছেন, বুঝে আসছে না। অনতিবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category