ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে আজ দুপুরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুই পক্ষের এই উত্তপ্ত মুখোমুখি অবস্থানকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে দুইজন আহত হয়েছেন এবং নগর ভবনের ভেতর ও আশপাশে বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
সূত্র জানায়, দুপুর ১২:৩০ মিনিটের দিকে নগর ভবনের ভেতরে ও সামনে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সময় এক পক্ষ ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে অন্য পক্ষ বাধা দেয়। শুরু হয় তর্ক, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতাহাতি এবং ধাক্কাধাক্কিতে রূপ নেয় ঘটনাটি। সংঘর্ষে আহত মনির হোসেন (৪৫) ও মহিদুল ইসলাম (৩৫) নামে দুইজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।
ঘটনার সময় উপস্থিত এক কর্মচারী জানান, “হঠাৎ করে ভবনের সামনের দিকে চিৎকার শুনে এগিয়ে যাই। দেখি একপক্ষ অপর পক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছিল না।” ঘটনাস্থলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং পরিস্থিতি কিছু সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ঘটনার সময় ভবনের ভেতরে সাধারণ নাগরিক, কর্মচারী এবং কর্মকর্তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে যান।
ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা দাবি করছেন, মেয়র নির্বাচিত হয়েও তাকে এখনো শপথ নিতে দেওয়া হয়নি। এজন্যই তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছিলো। কিন্তু দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এক পক্ষ রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। একাধিক দিনব্যাপী অবরোধ, ‘নগর ভবনের তালা’ লাগানো ও বিভিন্ন ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচির পেছনে যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে, আজকের সংঘর্ষে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সংঘর্ষের পর নগর ভবনের সামনে পুলিশ অবস্থান নেয় এবং সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। ঘটনাটি নিয়ে এখনো কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি, তবে ডিএমপি জানিয়েছে—ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং দায়ীদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বিগত একমাসেরও বেশি সময় ধরে ইশরাকপন্থীরা নগর ভবনের সামনে অবস্থান করে রেখেছিল। ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে তারা ভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দেয় এবং কর্মচারীদের প্রবেশে বাধা দেয়। পরে ২৩ জুন তালা খুলে ভবন উন্মুক্ত করা হয়। তবে রাজনৈতিক উত্তেজনা থামেনি। তালা খোলা নিয়েও দলীয় অন্তর্কোন্দল তৈরি হয় এবং ভবনে প্রবেশ–নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত রূপ নেয় আজকের সংঘর্ষের মাধ্যমে।
এই রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে নাগরিক সেবা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির হাজার হাজার বাসিন্দা দুর্ভোগে পড়েছেন। জন্ম-মৃত্যু সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং ট্যাক্স, রাস্তা সংস্কারসহ সব সেবা কার্যক্রম এক মাসের বেশি সময় ধরে ব্যাহত।