• বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৪ অপরাহ্ন
  • |
  • |

তিন হলে ভোটগ্রহণে বিশৃঙ্খলা

স্পষ্টবাদী ডেস্ক / ১৭ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
তিন হলে ভোটগ্রহণে বিশৃঙ্খলা
তিন হলে ভোটগ্রহণে বিশৃঙ্খলা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে তিনটি হলে ভোটগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থী ও প্রার্থীরা। শহীদ তাজউদ্দিন হল, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ও ফজিলাতুন্নেছা হলে ভোটগ্রহণে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থী ও প্রার্থীদের প্রতিবাদে দু’টি হলের মধ্যে একটিতে আধাঘণ্টা, আরেকটিতে একঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। এর মধ্যে শহীদ তাজউদ্দিন হল ও জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম হলে ভোটার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

তাজউদ্দিন হলে আধাঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ: শহীদ তাজউদ্দিন হলে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা না থাকা এবং ভোট দেওয়ার পর আঙুলে কালির চিহ্ন না রাখায় ভোটার ও প্রার্থীদের প্রতিবাদে প্রায় আধাঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। পরে ছবিসহ ভোটার তালিকা সংযুক্ত করার পর আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। তবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়া ১৫৩টি ভোট আবার যাচাইয়ের আশ্বাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১১টা ৫০ মিনিট থেকে ১২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। এ হলে মোট ভোটার সংখ্যা ৯৪৭ জন।

তাজউদ্দিন হলের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আলমগীর রুবেল বলেন, শিক্ষার্থীদের ইনডেক্স কার্ডের মধ্যে ছবি থাকবে কিন্তু এটি পরিবর্তন করা যায়। এক্ষেত্রে ছবি পরিবর্তন করে একজনের ভোট আরেকজনের দেওয়ার সুযোগ থাকে। নির্বাচন কমিশন থেকে প্রত্যেক হলে ছবিসহ ভোটার তালিকা দেওয়া হয়েছিল। আবার সকাল থেকে ১৫৩টি ভোট পড়লেও ভোট দেওয়ার পর কারও হাতে কালি দিয়ে চিহ্ন দেওয়া হয়নি। এতে জাল ভোট দিলেও তা চিহ্নিত করার কোনো সুযোগ নেই।

কেন্দ্রীয় নির্বাচন মনিটরিং কমিটির সদস্য সালেহ আহম্মদ বলেন,‘১৫৩ জন ভোটারের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। তাদের আঙুলে মার্কারের কালি দেওয়া হয়নি, ভোটার তালিকায় ছবি ছিল না। আমরা সেগুলো আলাদা করে রেখেছি, পরবর্তীতে ভেরিফাই করবো৷’

রিটার্নিং অফিসার ড. আলমগীর কবির বলেন, ‘আঙুলে মার্কারের কালি ও ভোটার তালিকায় ছবি থাকাটা ঐচ্ছিক ছিল। নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়নি৷ তবে ১৫৩ জনের ব্যাপারে যে অভিযোগ উঠেছে, আমরা তা ভেরিফাই করবো।

ফজিলাতুন্নেসা হলে ছাত্রীদের কেন্দ্রে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী হাসান প্রবেশ করায় হট্টগোল সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের বের করে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ এক ঘণ্টা বন্ধ থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টা দিকে ভোট কারচুপির অভিযোগ ওঠে। এই খবর পেয়ে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান লোকজন নিয়ে ছাত্রী হলে ঢুকে পড়েন। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, ছাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত হলে আব্দুল গাফফার জিসান নামে শেখ সাদী হাসানের একজন সমর্থক সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বের করে দিতে চান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের ধাক্কা দেন।

এতে তার সঙ্গে সাংবাদিকদের বাকবিতণ্ডা হয়। তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি সংগঠনের অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতা। এক পর্যায়ে সেখানে জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের বের করে দেন। ঘণ্টাখানেক বন্ধ থাকার পর দুপুর সোয়া একটার পর হলটিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।

বহিরাগত হয়ে মেয়েদের হলে প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জিসান জানান, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি হলে এসেছেন। প্রশাসনের কেউ না হয়ে তিনি কেন এই দায়িত্ব নিতে চান- এমন প্রশ্নের তেমন সদুত্তর দিতে পারেননি।

দুপুর ১২টার পর হলের গেটের সামনে দেখা যায়, হলের সামনে ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী হাসানসহ তার প্যানেলের কয়েকজন অবস্থান করছেন। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে তিনি চলে যান। হলের অন্যান্য প্রার্থীদের অভিযোগ, নিয়মবহির্ভূতভাবে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী এখানে প্রবেশ করেছেন। অথচ এখানে প্রবেশের এখতিয়ার তার নেই।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব এ কে রাশিদুল আলম বলেন, কেন্দ্রে একটা ভুলবোঝাবুঝি হয়েছিল। সে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ছাত্রদলের ভিপির কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কবি কাজী নজরুল হলে নেই ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, ব্যালট পেপারে ভুল
ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা না থাকা, অমোচনীয় কালি ব্যবহার না করা আর ব্যালট পেপারে ভুলের অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আনজুম রিফাত বলেন, ‘হল সংসদের কার্যকরী ভোট একজন তিনটা দিতে পারবে। অন্যান্য হলেও সেভাবে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে কিন্তু জাতীয় কবি নজরুল হলের ব্যালট পেপারে একটি দেওয়া। এখানে ভোটার তালিকা ছবিযুক্ত না।

অমোচনীয় কালিও ব্যবহার করা হচ্ছে না। এটি প্রশাসনকে জানানোর পরও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। এই হলে সবচেয়ে বেশি ভোটার ও প্রার্থী। এখানে কেউ ফেক আইডি ব্যবহার করে একজনের ভোট আরেকজন দিলেও সেটি শনাক্ত সম্ভব নয়।’

রিটার্নিং কর্মকর্তা মীর ফেরদৌস হোসেন সমকালকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমাদের ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা দেয়নি। তবে আমরা নিজেরাই করেছি। আর অমোচনীয় কালি ব্যবহারের নির্দেশনাও নেই। শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর আমাদের রেজিস্ট্রার খাতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে

। একজনের একাধিক ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। আর ব্যালট পেপারে কার্যনির্বাহী সদস্য পদের যে ভুল সেটি নির্বাচন কমিশনের। আমরা এখন কার্যনির্বাহী সদস্য পদে একটি ভোট দেওয়ার জায়গায় তিনটি হাতে লিখে দিচ্ছি। আর কয়েক ঘণ্টা পরপর কয়টি ভোট পড়েছে সেটি আমরা হিসাব রাখছি না।’

শেখ রাসেল হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মোসাব্বের হোসেন বলেন, এই হলের মোট ভোটার সংখ্যা ৭৩৫ জন। দুপুর ১টা পর্যন্ত এখানে ২৬০টি ভোট পড়েছে যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। আমাদের নির্বাচন কমিশন থেকে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া ছিল।

সে অনুযায়ী আমরা তালিকা প্রণয়ন করেছি। ভোটারদের ইনডেক্স কার্ড বা লাইব্রেরি কার্ডের ছবির সঙ্গে ভোটার তালিকার ছবি মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। ভোটগ্রহণ শেষে হাতে মার্কারের কালি দিয়ে চিহ্ণ দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী বা ভোটারের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

রফিক-জব্বার হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, এই হলে ভোটার সংখ্যা ৬৫১। এখন পর্যন্ত ভোট দিয়েছে ২১৬ জন। যা মোট ভোটারের ৩১.১৮ শতাংশ। আমরা নির্বাচন কমিশনের দেয়া ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী যাচাই করছি।

প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটি ছাত্র সংগঠনের প্রার্থীকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ ছাত্রদলের
এর আগে, সকাল ১০টার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হলে ভোট দেন ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী হাসান এবং ছাত্রশিবির সমর্থিত আরিফ উল্লাহ আদিব। এ সময় ছাত্রদলের প্রার্থী সাদী হাসান প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটি ছাত্র সংগঠনের প্রার্থীকে সুযোগ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ করেন। কাউকে জেতানোর জন্য অতিরিক্ত ব্যালেট পেপার ছাপানোর অভিযোগও করেন তিনি।

তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর আস্থা রাখতে চান ছাত্রশিবিরের প্রার্থী। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদও প্রকাশ করেন আদিব। নিয়মভঙ্গ করে সাবেক শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আনাগোনা করার বিষয়ে কমিশনে অভিযোগ জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে দাবি করেন শিবির সমর্থিত এই ভিপি প্রার্থী।

৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচনে এ বছর ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন লড়ছেন। এছাড়া হল সংসদের লড়ছেন ৪৪৫ প্রার্থী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category