বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) টুঙ্গিপাড়া বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট অনিয়ম, লুটপাট আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্কিলস্ ফর ইন্ডাস্ট্রি কম্পিটিটিভনেস এন্ড ইনোভেশন প্রোগ্রামে (এসআইসিআইপি) লুটপাট, সহকর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার, আনসার ট্রেনিংয়ে তেল চুরির ভাগ, টাকার মাধ্যমে লোক ভর্তি সহ নানা অভিযোগ উঠেছে টুঙ্গিপাড়া বিআরটিসি বাস ডিপোর ব্যবস্থাপন এনামুল হকের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ব্যবস্থাপক এনামুল হক যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম আর দুর্নীতিতে চালাচ্ছেন টুঙ্গিপাড়া বিআরটিসি বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। এসআইসিআইপি প্রকল্পে নিয়ম রয়েছে প্রশিক্ষণ ট্রেড বা কোর্স শুরু করার পূর্বে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, এলাকা ভিত্তিক মাইকিং ও ডিসি অফিসের নোটিশ বোর্ডে ড্রাইভিং শিখতে আগ্রহীদের বাছাই করে ভর্তি করতে হবে। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে টাকা নিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের ভর্তি করিয়েছে। এসব কাজে ম্যানেজার এনামুল হককে সহযোগিতা করে টুঙ্গিপাড়া বাস ডিপোর চালক মাধব হীরা ও কারিগর জাহিদ। তারা গরিব ও বেকার প্রশিক্ষণার্থীদের আত্মকর্মসংস্থানমূলক এ প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি না নিয়ে ১৫০০-২০০০ টাকা উৎকোচ নিয়ে বিত্তবান ও আর্থিকভাবে সচ্ছলদের ট্রেনিংয়ে ভর্তি করেছে। যেখানে টুঙ্গিপাড়া অঞ্চলের মধ্যে লোক ভর্তি করার কথা, সেখানে ট্রেনিং পাচ্ছে ময়মনসিংহ সহ ভিন্ন জেলার লোকজন।
এছাড়া নিজের লাভের জন্য বিআরটিসির ব্যবস্থাপক এনামুল হক, চালক মাধব হীরাকে দিয়ে ইন্সট্রাক্টর হিসেবে ট্রেনিং করায়। যেখানে বিআরটিসির প্রধান কার্যালয় থেকে শহীদুল ইসলামকে ট্রেনিং ইনচার্জ করে পাঠানো হলেও অদৃশ্য কারণে তাকে বাদ দিয়ে ম্যানেজার এনামুল হক মাধব হীরাকে দিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করছেন। আর ভর্তির সময় পুলিশ ও শিক্ষকদের সম্মানী মাধব হীরার মাধ্যমে ভাউচার করে উঠিয়ে নিজেরাই আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিসির একজন চালক বলেন, আনসারদের ট্রেনিং চলে মাদারীপুর-শরীয়তপুর। সেখানে একজন আনসার সদস্যকে গাড়ি চালানো শেখানোর জন্য সরকার নির্ধারিত যে সময় থাকে তার থেকে কম সময় শিখিয়ে তেল চুরি করতে বলে ব্যবস্থাপক এনামুল হক। আর সেই তেলের ভাগ না দিলে চালকদের বদলির হুমকি ও চাকুরি খাওয়ার ভয় দেখান বলেও জানা গেছে।
এছাড়া কারিগর জাহিদকে গাড়িতে কাজ করার জন্য নিয়োগ দিলেও সে স্টোর রুম সামলায়। বিভিন্ন গাড়ির পার্স না কিনে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে প্রতিমাসে লক্ষ-লক্ষ টাকা দু’জনে ভাগবাটোয়ারা করেশ্ব অংশ খাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে বিআরটিসির আর সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টুঙ্গিপাড়ার আরেকজন চালক বলেন, বিআরটিসি টুঙ্গিপাড়া বাস ডিপো ও টেনিং ইনস্টিটিউট দুর্নীতি ও অনিয়মে জর্জরিত। ম্যানেজার এনামুল হক কোন নিয়ম কানুন না মেনে ডিপো চালাচ্ছেন ইচ্ছামতো। তার খুঁটিতে নাকি অনেক জোর। তাই ম্যানেজার হওয়ার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর সাবেক বিআরটিসির চেয়ারম্যানকে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে সে ম্যানেজার হয়। সে মূলত বিআরটিসির একাউন্টস অফিসার।
বিআরটিসিতে কর্মরত একজন নারী বলেন, ম্যানেজার আমার সাথে প্রচুর দুর্ব্যবহার করে। আশা যাওয়ার সময় আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে তার কক্ষে ডেকে প্রচুর বকাঝকা করে। এছাড়া ঈদ-কোরবানিতে সবার বেতন ঠিকঠাক মতো দিলেও আমার বেতন আটকে রেখেছিলো। পরে উর্ধ্বতন অফিসারদের জানানোর পর সম্পূর্ণ বেতন না দিয়ে কিছু টাকা দিয়েছিলো। আর বাস ডিপোর অনিয়ম দুর্নীতি তো আছেই। কিন্তু ভয়ে আমরা কেউ মুখ খুলতে পারিনা।
অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া বিআরটিসি বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এর ব্যবস্থাপক এনামুল হকের মুঠোফোনে (০১৭১২…২০) একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। পরে আরেক প্রতিনিধি হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সারা দেননি।