জানা যায়, উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের চিতলমারীতে উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়াসহ কোটি কোটি টাকার সবজি নিয়মিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরসহ শহরাঞ্চলের বাজারে যাচ্ছে। মাছের ঘেরপাড়ে অভিনব কায়দায় এই সবজি উৎপাদন করেন কৃষকরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ‘জমি যার ঘের তার’ আদর্শকে সামনে রেখে চিতলমারীতে ঘেরপাড়ে প্রায় সারা বছরই নানা ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়। সবজি উৎপাদন থেকে শুরু করে শহরের কাঁচাবাজারে সরবরাহ পর্যন্ত নানা পর্বে নিয়োজিত থেকে কৃষি-অর্থনীতিকে সচল রাখছে উপজেলার বিভিন্ন বয়সী মানুষ।
কৃষকদের অভিযোগ, সবজিচাষে অক্লান্ত পরিশ্রম করলেও এর ন্যায্যমূল্য পেতে এই এলাকায় কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের দাবি কৃষকদের দীর্ঘদিনের। এর অভাবে উৎপাদিত অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যায়।
অপরদিকে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন তারা। ফলে লাভের গুড় পিঁপড়ায় খায়—অর্থাৎ লাভবান হন মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা। ভুক্তভোগী স্থানীয় কৃষক ও মিষ্টি কুমড়া ব্যবসায়ীরা এ ব্যাপারে তাদের অভিমত জানিয়েছেন। সন্তোষপুর ইউনিয়নের দড়িউমাজুড়ি গ্রামের প্রফুল্ল মণ্ডলের ছেলে প্রসেনজিৎ মণ্ডল বলেন, চলতি মৌসুমে মিষ্টি কুমড়ার উৎপাদন খুবই ভালো।
ফলে নিজের বাড়িতেই আড়ৎ করে এলাকার ভালো মিষ্টি কুমড়াগুলো সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করি। এলাকার কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে কিনেছিলাম। প্রায় এক মাস সংরক্ষণের পর এখন সেই মিষ্টি কুমড়া শহরে সরবরাহ করতে হচ্ছে। প্রসেনজিৎ আরো বলেন, এক মাসেই অনেক মিষ্টি কুমড়া নষ্ট হয়ে গেছে এবং ক্রয়মূল্যের চেয়ে প্রতিকেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এলাকায় কোল্ড স্টোরেজ থাকলে এমন ক্ষতির মুখে পড়তে হতো না।
এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারি সহযোগিতা দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকার সবজিচাষিদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
চিতলমারী সদর ইউনিয়নের আড়ুয়াবর্নী গ্রামের মান্নান শেখের ছেলে মিষ্টি কুমড়া আড়তদার নূর আলম শেখ বলেন, কৃষি ব্যাংক থেকে আগের মতো ৪ শতাংশ হারে ঋণ সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা হলে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যেত।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সিফাত-আল-মারুফ জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় ৫৫৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। এই জমিতে মোট উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার মেট্রিক টন, যার বর্তমান স্থানীয় বাজারমূল্য ৫০ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া চিতলমারীতে অন্যান্য সবজির পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় টমেটো। প্রতি মৌসুমে চিতলমারী উপজেলায় যে পরিমাণ টমেটো উৎপাদিত হয়, যার স্থানীয় পাইকারি বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকারও বেশি। অর্থাৎ প্রতি সবজি মৌসুমে চিতলমারী থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ শহরাঞ্চলে কোটি কোটি টাকার সবজি ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে নিয়ে তা সরবরাহ করেন।
সিফাত-আল-মারুফ বলেন, চিতলমারীতে ব্যতিক্রম একটা বিষয় হলো এখানে ‘জমি যার ঘের তার’ আদর্শকে মেনে হাজার হাজার পকেট-মৎস্যঘের রয়েছে। এসব ঘেরের পাড়ে প্রায় সারা বছর নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করেন কৃষকরা। সেই সবজি কৃষকের কাছ থেকে কিনে বেপারীরা শহরাঞ্চলে সরবরাহ করে লাভবান হন। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়।