থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ থাকসিন সিনাওয়াত্রা গোপনে দেশ ছেড়েছেন। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের প্রাইভেট জেটে তিনি ব্যাংককের ডন মুয়াং বিমানবন্দর থেকে দেশ ত্যাগ করেন। উদ্দেশ্য ছিল সিঙ্গাপুর যাবেন। কিন্তু সেখানে না গিয়ে তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি গিয়েছে দুবাই।
খবরে বলা হয়, আগামী সপ্তাহে থাকসিনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে তার কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর আগে হঠাৎ করেই দেশ ছাড়ায় জল্পনা শুরু হয়েছে, তিনি হয়তো আর ফিরবেন না। যদিও থাকসিনের দাবি, তিনি সিঙ্গাপুরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। পুলিশের বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, তার দেশত্যাগের সময় কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না।
৭৬ বছর বয়সী থাকসিনকে ২০০৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরপর ১৫ বছর তিনি স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন, যার বেশিরভাগ সময় ছিলেন দুবাইতে। গত বছর তার মেয়ে প্যেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা থাইল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হন। তবে এক সপ্তাহ আগে নৈতিকতা সংক্রান্ত তদন্তের পর তাকেও পদচ্যুত করা হয়।
শুক্রবার ভোরে এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্টে থাকসিন লিখেছেন, তিনি সিঙ্গাপুরে নামতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাত ১০টার পর সেলেতার বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অবতরণ সম্ভব হয়নি। তাই তিনি পাইলটকে দুবাইয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সেখানে তাঁর নিয়মিত অর্থোপেডিক ও ফুসফুস বিশেষজ্ঞ আছেন বলেও জানান তিনি।
আদালতের রায় নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। ২০২৩ সালে দেশে ফেরার পর থাকসিনকে আটক করা হয় এবং অনুপস্থিতিতে দেওয়া ৮ বছরের সাজা কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাজা মহা ভাজিরালংকর্ণ তার সাজা এক বছরে নামান। পরে তিনি ছয় মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাটিয়ে জামিনে মুক্তি পান। আগামী মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট ঠিক করবে, হাসপাতালের সময় সাজা হিসেবে গণ্য হবে কি না। নেতিবাচক রায় হলে তাকে আবার কারাগারে যেতে হতে পারে।
গোপনে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে উড়াল দিয়ে দুবাই পৌঁছান থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, দেশে ফেরার আগে থাকসিন হয়তো সামরিক ও রাজতন্ত্রপন্থী শক্তির সঙ্গে গোপন সমঝোতায় পৌঁছেছেন। তবে তিনি নিজে এমন কোনো সমঝোতা অস্বীকার করেছেন।
এরই মধ্যে শুক্রবার থাইল্যান্ডে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। পিউ থাই পার্টি শেষ মুহূর্তে সাবেক ন্যায়মন্ত্রী চাইকাসেম নিটিসিরিকে মনোনয়ন দিয়েছে। তবে দলের জনপ্রিয়তা কমে গেছে। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছে ভুমজাইথাই পার্টি।
গোপনে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে উড়াল দিয়ে দুবাই পৌঁছান থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী
ভুমজাইথাই পার্টির নেতা আনুতিন চার্নভিরাকুল পিপলস পার্টির শর্তসাপেক্ষ সমর্থন পেয়েছেন। তারা ক্ষমতায় এলে সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচন এবং সংবিধান প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে পিপলস পার্টি বিরোধীদল হিসেবেই থাকবে।
গোপনে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে উড়াল দিয়ে দুবাই পৌঁছান থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী
মুভ ফরওয়ার্ড পার্টির পুনর্গঠন হওয়া এই দলটি রাজতন্ত্র সংস্কারের কারণে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। তরুণ সমর্থকেরা আন্দোলন করলেও দমন-পীড়নের মুখে তা স্তিমিত হয়ে গেছে। আনুতিনের রাজতন্ত্রপন্থী অবস্থান ও মুভ ফরওয়ার্ডের বিরোধিতা ভবিষ্যতে নতুন জোটে টানাপোড়েন তৈরি করতে পারে। ফলে থাইল্যান্ড এখন অনিশ্চয়তার নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে।