এ সময় উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কারা অধিদপ্তরের কারা-উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) মো. মনির আহমেদ, খুলনা জেলা কারাগারের জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান, ডেপুটি জেল সুপার আব্দুল্লাহ হেল আল আমিন, জেলার মুহাম্মদ মুনীরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সরেজমিন নতুন কারাগারে গিয়ে দেখা যায়, কারাগারের ভেতরে আছে- পাকা পথ, রঙিন ভবন, পার্কিং টাইলসের ফুটপাত, মসজিদ, হাসপাতাল। বন্দিদের জন্য নির্মিত প্রতিটি ভবনের চারপাশে রয়েছে পৃথক সীমানাপ্রাচীর, যাতে এক শ্রেণির বন্দি অন্য শ্রেণির সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে। মোট ৫৭টি স্থাপনা নির্মিত হয়েছে, যার মধ্যে বন্দিদের থাকার ভবন ১১টি।
নিরাপত্তা জোরদারে পুরো কারাগারের ভেতরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়াল নির্মিত হয়েছে। নবনির্মিত কারাগারের দক্ষিণ- পশ্চিম কোণে রয়েছে ফাঁসির মঞ্চ। ছাই রংয়ের টিনের শিট আর চালে ঢেউ টিনে নির্মিত ফাঁসির মঞ্চের ঘরটি। যা কিনা দেশের ‘সবচেয়ে আধুনিক ফাঁসির মঞ্চ’ বলে দাবি কারা কর্তৃপক্ষের।
কারা সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় পুরোনো ও নতুন দুটি কারাগার পরিচালনায় মোট ছয়শজন জনবল প্রয়োজন হলেও বর্তমানে রয়েছে ২০৮ জন। সম্প্রতি নতুন করে আরও ৪৪ জনকে পদায়ন করা হয়েছে। সীমিত জনবল নিয়েই আপাতত দুটি কারাগার পরিচালনা করা হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুরোনো কারাগারে রাখা হবে খুলনা মহানগরের বন্দিদের এবং নতুন কারাগারে জেলার নয় উপজেলার বন্দিদের।
নতুন এই কারাগারটি নির্মিত হয়েছে আধুনিক সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য পৃথক ভবন, নারী, কিশোর ও কিশোরীদের জন্য আলাদা ব্যারাক, হাসপাতাল, ওয়ার্ক শেড ও মোটিভেশন সেন্টারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বন্দিদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল, আর কারারক্ষীদের পরিবারের জন্য নির্মিত হয়েছে স্কুল, ডাইনিং, লাইব্রেরি, সেলুন ও লন্ড্রি। শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য রয়েছে ডে-কেয়ার সেন্টার, যেখানে সাধারণ বন্দিদের প্রবেশাধিকার থাকবে না।
খুলনা জেলা কারাগারের জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হলো ১০০ বন্দিদের স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে। নতুন জেল হওয়ায় অনেক চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১০০ আসামিকে আনা হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নতুন এ কারাগারে মোট ৫২টি অবকাঠামো রয়েছে। এই কারাগারে সর্বোচ্চ ৪ হাজার বন্দি ধারণ করতে সক্ষম। এটি একটি সংশোধনাগার হিসেবে নকশা করা হয়েছে। যেখানে বিচারাধীন ও দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য পৃথক ইউনিট ছাড়াও কিশোর ও নারী বন্দিদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, নতুন কারাগার কমপ্লেক্সটি খুলনা সিটি বাইপাস (রূপসা ব্রিজ রোড) রোডে ৩০ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে। ২০১১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১৪৪ কোটি টাকার প্রাথমিক বাজেট এবং ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময়সীমা দিয়ে খুলনায় কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। এরপর একাধিকবার সময়সীমা বাড়ানো এবং দুবার বাজেট সংশোধনের পর প্রকল্পের খরচ দাঁড়ায় ২৮৮ কোটি টাকায়। কারাগারটি ৪ হাজার বন্দি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন হলেও, বর্তমান অবকাঠামোতে ২ হাজার বন্দি থাকতে পারবে।