রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান বলেছেন, ‘আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করেন— ড. ইউনূস সরকারের যে উপদেষ্টা পরিষদ, তার মধ্যে কোন উপদেষ্টা এই সরকারের মান সবচেয়ে বেশি ডুবিয়েছে? আমার জবাব হবে, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। কারণ তিনি একটার পর একটা বিতর্কিত কাজ করে চলেছেন এবং তিনি ক্ষমতায় বা দায়িত্বে আছেন এখনো। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, আসিফ মাহমুদ তার জায়গায় থেকে যাবেন। এক্ষেত্রে ড. ইউনূসের আচরণ বেশ খানিকটা শেখ হাসিনার মতো মনে হয়।
কিন্তু শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে একটা কারণ খুঁজে পাই। ড. ইউনূসের ক্ষেত্রে কারণ খুঁজে পাই না।’
তিনি বলেন, ‘একটা নিউজে দেখেছি, আসিফ মাহমুদের বাবা তার এলাকায় উপদেষ্টা পুত্রকে ভিত্তি করে এক ধরনের মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছেন। যদিও এই রিপোর্টকে ভিত্তিহীন করে দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে — যেহেতু ওই চ্যানেলের মালিক ইশরাক হোসেন, তাই তিনি আক্রমণাত্মক হয়ে আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে এ রকম রিপোর্ট করিয়েছেন।
ব্যাপারটা কি এতটা সরল, আমি প্রত্যেককে অনুরোধ করব রিপোর্টটি একটু দেখে রাখার জন্য। কিছুদিন আগে মাদক ব্যবসায়ী অপবাদ দিয়ে একই পরিবারের মা, কন্যা এবং পুত্রকে পিটিয়ে কুপিয়ে পাথর দিয়ে থেঁতলে হত্যা করা হয়েছিল। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণেই আসলে এখানে হত্যাকাণ্ডটা হয়েছে বলে এই রিপোর্টে বলা হচ্ছে এবং যে হত্যাকারী আছেন, যার মদদে হত্যা হয়েছে, তিনি আসিফ মাহমুদের বাবার আশ্রয়ে আছেন।’
‘এছাড়া খুবই ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে, একজন আওয়ামী লীগ করা চেয়ারম্যান ওখানে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন এবং আসিফের বাবার সঙ্গে তিনি ঘুরে বেড়ান এবং তাকে নিয়েই আসিফ মাহমুদের বাবা এই কাজগুলো করেন।
আরো মজার বিষয় হচ্ছে, আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন ওই স্টেজে যিনি সম্ভবত ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন; তার ওখানে যখন নির্বাচনী ক্যাম্পেইন হয় সেই চেয়ারম্যান এবং আসিফ মাহমুদের বাবা আওয়ামী লীগের হয়ে সেই স্টেজে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন বলে রিপোর্টে আছে।’
‘সবচেয়ে মর্মান্তিক যে ঘটনা সেটা হলো— আসিফ মাহমুদের বাবা যে স্কুলের হেডমাস্টার, তার অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার ছিলেন একজন সনাতন ধর্মের নারী। সেই নারী শিক্ষকের এক বীভৎস নির্যাতনের বর্ণনা তার বয়ানেই আছে। কিভাবে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকে বিবস্ত্র করে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে শরীরে জখম হয়েছে।
এখানেও পরিকল্পিত মব হয়েছে। তাকে স্কুল থেকে বের করে গ্রামে অবমাননাকরভাবে ঘোরানো হয়েছে। এই ঘটনায় যেটা জানা যায় সেটা হচ্ছে, আসিফ মাহমুদের বাবা স্কুলের টাকা চুরি করেছিলেন। সেটা তদন্ত হয়, সেটা নিয়ে ব্যবস্থা হয়। সেই সময় এই শিক্ষিকা সেই স্কুলেই ছিলেন। সেই ঘটনায় এখন আসিফের বাবা সেই নারী শিক্ষিকার ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। কারণ, এখন তার ছেলে উপদেষ্টা হয়েছে। এ ধরনের অক্ষম মানুষের হাতে যখন ক্ষমতার হ্যাডাম যায়, তাদের পরিস্থিতি কোন জায়গায় যায় তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। অত্যন্ত প্রান্তিক জায়গায় থাকা মানুষের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার এক বীভৎস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।