অনেক ভাবনা-চিন্তার পর ছবিটিতে যুক্ত হয়েছিলাম। পরিতোষ বাড়ৈর ‘নরক নন্দিনী’ অবলম্বনে চিত্রনাট্য, তার ওপর সহশিল্পী ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, নির্মাতা সোয়াইবুর রহমান রাসেল—সবই মনের মতো। চুক্তিবদ্ধ হলাম ২০১৮ সালের শেষদিকে।
এরপর বার কয়েক কাহিনি ও চিত্রনাট্যে পরিবর্তন হলো। ফাইনাল হলো ২০১৯ সালের মাঝামাঝি। শুটিং ডেট যখন পড়ল তার মাঝেই করো না। বর্ডার বন্ধ হয়ে গেল। ইন্দ্রনীলও আসতে পারলেন না। আমরা ২০২১ সালের শেষের দিকে আবার শুটিং করলাম। শেষ করে সম্পাদনা ও অন্যান্য পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ করতে করতে ২০২৩ সাল হলো। পরিচালক রাসেল জানালেন, ২০২৪ সালে ছবিটি মুক্তি দেবে। গত বছর ২ আগস্ট মুক্তির তারিখও ঘোষণা করা হলো। প্রচার-প্রচারণাও শুরু করেছিলাম আমরা।
এর মধ্যেই জুলাই অভ্যুত্থান। ভাবলাম খুব একটা সমস্যা হবে না। কিন্তু ২০ জুলাইয়ের পর বুঝতে পারলাম ধারণা ভুল। শুধু ছাত্র নয়, সাধারণ মানুষও আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। ২২ জুলাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ২ আগস্ট ছবিটা মুক্তি দেব না। এক বছর পর আরেক আগস্ট পেরিয়ে অবশেষে আবার মুক্তির তারিখ ঠিক হলো। বুঝতে পারছেন অপেক্ষাটা কোন লেভেলের। এই ফল মিষ্টি না হলে আর বিশ্বাসই করব না, ‘অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়!
আমাকে নায়িকাই করতে হবে এমন চাহিদা নেই
ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ২০০৬ সালে। তারও এক যুগ পর এলেন চলচ্চিত্রে। এত সময় নিলেন কেন? শুরুটা মডেলিং দিয়ে। তখন দেশ সেরা ব্রান্ডগুলোর মডেল হতাম, শুভেচ্ছাদূত হতাম। ভাবতাম এই তো বড় ব্যাপার। সত্যি বলতে বয়স কম ছিল। কেউ বোঝানোরও ছিল না। সারা জীবন চলচ্চিত্র দিয়ে বেঁচে থাকা যায়, সেটা মাথায় আসেনি। সোহানুর রহমান সোহান স্যার আমাকে চলচ্চিত্রে নেওয়ার জন্য কয়েকবার বাসায়ও এসেছিলেন। তিনি আমার বাবার ক্লোজ বন্ধু ছিলেন। বাবা তাঁকে বললেন, গল্প-চিত্রনাট্য ভালো হলে সমস্যা নেই।
পরে তিনি যে গল্প বাবাকে শুনিয়েছিলেন সেটা ছিল তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবি। নাচে-গানে ভরপুর। বাবা জানালেন, ছবিটি করা যাবে না। আমিও বাবার কথায় সায় দিয়ে সোহান স্যারকে না করে দিয়েছিলাম। পরে জেনেছিলাম ছবিতে আমার নায়ক হওয়ার কথা ছিল আরিফিন শুভর। যা হোক, ক্যারিয়ারের বয়স এক যুগ হওয়ার পর মনে হলো, নাটক যেহেতু করছি চলচ্চিত্র করলেও ক্ষতি নেই। তখন কয়েকটি গণমাধ্যম আমার এ কথাটা প্রকাশ করেছিল। এরপর তো ‘নন্দিনী’।
আমাকে নায়িকাই করতে হবে এমন চাহিদা নেই
প্রায় চার বছর হতে চলল, শোবিজ থেকে দূরে আছেন। খারাপ লাগে না?
অতটা খারাপ লাগে না। ২০২১ সালে মা হওয়ার পর মনে হলো সন্তানকে সময় দিতে হবে। সেটাই করলাম। এখন আমার মেয়ে স্কুলে পড়ছে। পাশাপাশি আমি কিন্তু কসমোটলজিস্ট, একটা বিউটি স্টুডিও আছে আমার। সেখানে সময় দিই। বাচ্চা স্কুল থেকে এসে আমার সঙ্গেই স্টুডিওতে থাকে। বাচ্চা, সংসার আর বিউটি স্টুডিও—কখন যে সময় কেটে যায় বুঝতে পারি না।
শোবিজে ফেরার ইচ্ছা কি একেবারেই নেই?
শোবিজ ছেড়ে দিয়েছি, এমন ঘোষণা কিন্তু দিইনি। এখনো কাজ করার ইচ্ছা আছে। তবে চার বছর পর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াব, নিশ্চয়ই ভালো গল্প এবং মেকার হতে হবে। চলচ্চিত্রেও কিন্তু কাজ করার ইচ্ছা আছে। সেটাও যদি মনের মতো চরিত্র হয়। বলে রাখি, আমাকে নায়িকাই করতে হবে এমন চাহিদা নেই।
অভিনয় না করলেন, এখনকার নাটক-চলচ্চিত্র দেখেন?
অবশ্যই দেখি। সব সময়ই আমি প্রেক্ষাগৃহের দর্শক। ‘বিশ্বসুন্দরী’ থেকে শুরু করে হালের ‘বরবাদ’, ‘তুফান’, ‘সুড়ঙ্গ’—কোনটা দেখিনি! নাটকের বেলায়ও তাই। ভালো নাটক মুক্তি পেলেই ইউটিউবে দেখি। মাঝেমধ্যে অভিনয়শিল্পীদের ফোন করে প্রশংসাও করি।