বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপও প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে। অবশ্য চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায়ে বেশ অগ্রগতি দেখা দিয়েছে। কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয় আর্থিক চাহিদার তুলনায়। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে। আবার সামনেই কিনতে হচ্ছে নির্বাচনি সরঞ্জাম। বাড়াতে হয়েছে পুলিশের ঝুঁকি ভাতা। অতীত সরকারের নেওয়া বিভিন্ন ঋণের সুদ আসল পরিশোধের চাপ তো আছেই। ফলে আর্থিক চাপে একরকম দিশাহারা হয়ে পড়েছে সরকার। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এজন্য আগামী বাজেট সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি ব্যয়ের লক্ষ্য কমানোর কৌশল নিলে বাস্তবে তা হচ্ছে না। বরং ব্যয়ের লক্ষ্য আরও বাড়াতে হচ্ছে।
অবশ্য উন্নয়ন বাজেট কমিয়ে আনা হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। সেখানে কমতির ওপর আরও ছুরি চালাতে যাচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা। আগামাী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হলে তার জন্য অতিরিক্ত অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। আবার সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন পে-স্কেল ঘোষণার কাজও চলমান। ফলে নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর মার্চের দিকে বাজেট সংশোধন করা হলেও এ বছর অন্তত তার তিন মাস আগেই ডিসেম্বরের মধ্যে বাজেট সংশোধন করা হবে। সে কাজ ইতোমধ্যে শুরুও করেছে মন্ত্রণালয়গুলো।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৪৩ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা এবং ভাতায় ৪১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। মোট বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। কিন্তু সরকারি চাকুদের কিছু বাড়তি আর্থিক সুবিধা দেওয়ার কারণে বেতন-ভাতা খাতের বরাদ্দ আরও বাড়াতে হতে পারে।
গত জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতনের ওপর গ্রেড-১ থেকে ৯ পর্যন্ত ১০ শতাংশ এবং গ্রেড-১০ থেকে ২০ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হারে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। গত জুলাই থেকে পুলিশ সদস্যদের ঝুঁকি ভাতা ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। যা অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকার ব্যয় বাড়াবে। একই সময়ে ১ হাজার ৫১৯টি মাদরাসা এমপিওভুক্ত করা হয়েছে এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। জাতীয়করণের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকদের আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এসব কারণে সরকারের ওপর আর্থিক চাপ প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
এদিকে সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ভাতা সম্প্রতি দ্বিগুণ করা হয়েছে। বিদেশি মিশনে কর্মরতদের বৈদেশিক ভাতা ২০ থেকে ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া ভর্তুকি হিসেবে ৬২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বকেয়া ঋণ পরিশোধের চাপ তো রয়েছেই।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের ব্যয়ের অগ্রাধিকার খাত পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কোন কোন খাতে সাশ্রয় করা সম্ভব তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া উন্নয়ন বাজেটের পরিধি আরও ছোট করা হচ্ছে। আর্থিক খাতের সংস্কার, অতিরিক্ত আর্থিক চাপ, নির্বাচন, অর্থের জোগানের চাপ, সম্ভাব্য সাশ্রয় উপযোগী খাত চিহ্নিতকরণ এবং কৃচ্ছ্রসাধন নীতি কঠোরভাবে পরিপালনের জন্য আগাম বাজেট সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডিসেম্বরেই বাজেট সংশোধন জরুরি হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া ভর্তুকির ৬২ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, অন্যান্য বকেয়াও পরিশোধ চলছে। তবে নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে খরচ বেড়ে গেছে, যা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সামনেই তো নির্বাচন। এজন্য ডিসেম্বরেই বাজেট সংশোধন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।